ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন এক মাস পর ক্লাসে ফিরেছেন। এর আগে গতকাল ক্যাম্পাসে ফিরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের ৫০১ নম্বর রুমে ওঠেন। সোমবার সকালে সহপাঠীদের সঙ্গে ফিন্যান্স বিভাগের ক্লাসে অংশ নেন তিনি।
ক্লাসে ফেরার অনুভূতি জানিয়ে ফুলপরী বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আজকে প্রথম ক্লাসে এসেছি। ক্লাসে ফিরতে পেরে খুব ভাল লাগছে। আমার বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতা পেয়েছি। আমি এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস করব। আগে নিরাপত্তাজনিত কারণে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে সে ভয় এখন নেই। আমাকে হলেও সিট বরাদ্দ দিয়েছেন। আমি সেখানে ভাল আছি। আশা করি স্বাভাবিকভাবে একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে চাই।’
ফুলপরীর সহপাঠী ও ওই ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধি রায়হান বলেন, ‘গত একমাস ক্লাস করেনি। তবে আজকে ক্লাস করেছেন। ফুলপরী খুব বন্ধুসুলভ। আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’
তার সহপাঠী বান্ধবীরা বলেন, ‘ফুলপরীকে ক্লাসে পেয়ে আমরা আনন্দিত। সে সবার সাথে ভালভাবে মিশে গেছে। আমরা তার যেকোনো সহযোগিতায় পাশে থাকব। আর প্রত্যাশা থাকবে তার সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি যেন অন্য কারও সঙ্গে না হয়। আমরা মনে করি তার মতো সকল মেয়েদের সাহসী হওয়া উচিত।’
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে প্রায় এক মাস শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি নির্যাতনের শিকার ছাত্রী। এই সময়ে তার সহপাঠীরা নিয়মিত ক্লাস করলেও ভুক্তভোগীকে বাড়ি থেকে ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়াতে হয় নির্যাতনের বিচার পেতে। ফলে অন্যদের থেকে একাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে অতিথি হিসেবে উঠে ক্লাস শুরু করেন ভুক্তভোগী। পরে ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৩ তারিখ সকালে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ দিতে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিতে ও হল পছন্দ করতে কয়েক দফা ক্যাম্পাসে এলেও ক্লাসে ফেরা হয়নি তার।
এর আগে উচ্চ আদালত থেকে পছন্দের হল বরাদ্দের নির্দেশের পর গত ৪ মার্চ ক্যাম্পাসে এসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। পরে ওই হলের একটি কক্ষে তাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। হল বরাদ্দ দেওয়া হলে সেদিন বাড়ি ফিরে যান তিনি।
এ বিষয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, আজকে ফুলপরী ক্লাসে এসেছেন। এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস করবে। আমরা ওই ছাত্রীর খোঁজ-খবর রাখছি। একাডেমিক কমিটির মিটিংয়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। ওই ছাত্রী ক্লাসে এলে যেন কোন ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় না পড়ে এবং কোনো ধরনের বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় এ নিয়ে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া গত মাসে ক্লাসে অংশ না নিলেও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আমরা বিষয়টি দেখব।