প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরে দেশের সাড়া জাগানো মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদ কয়েকশ কোটি টাকার বিনিয়োগ এনেছে বলে জানিয়েছেন নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুক।
গত রোববার সন্ধ্যায় দেশের স্টার্টআপ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি এক মতবিনিময়ে মিলিত হন তানভীর এ মিশুক। সোমবার (১৯ আগস্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুই ঘণ্টার এই মতবিনিময় সভায় দেশের তরুণ সব ডিজিটাল ব্যবসার উদ্যোক্তারা যুক্ত হয়ে নানান প্রশ্ন করেন। সাংবাদিকরাও এতে যুক্ত ছিলেন, তারাও নগদ সিইওকে প্রশ্ন করেন।
এ সময় তিনি জানান, এখনো সেবা শুরু হয়নি। তারপরেও ইতোমধ্যে নগদ ডিজিটাল ব্যাংকে ১১২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ ঢুকেছে।
তানভীর বলেন, বেশ কয়েকটা বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নগদ মোবাইল আর্থিক সেবা এবং নগদ ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগ করেছে। এমন প্রতিষ্ঠান নগদে বিনিয়োগ করেছে যাদের বিনিয়োগ ফেসবুকেও (মেটা) আছে। তাছাড়া ভারতের পেটিএম-এর একটি সিস্টার কনসার্নসহ বিশ্বের নামকরা কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অডিম ফার্ম ডেলয়েট নগদের দৈনিক লেনদেন অডিট করে থাকে।
এক প্রশ্নের উত্তরে নগদের সিইও বলেন, যাত্রার শুরুতেই বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবার মনোপলি ভেঙে দিয়েছে নগদ লিমিটেড। একারণেই ধারাবাহিক নোংরা অপপ্রচারের শিকার হয়ে আসছে এই বিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। আর সম্প্রতি গণ-অভ্যুত্থানে দেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর নগদকে নিয়ে অপপ্রচারের মাত্রা আরো বেশী হতে থাকে।
প্রসঙ্গত, ডিজিটাল স্পেসে সাম্প্রতিক এই আলোচনা-সমালোচনার সূত্র ধরে নগদ এবং নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য শতাধিক তরুণ স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তানভীর এ মিশুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সানন্দে রাজি হন। তানভীরের বাবা ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি। বাবার শয্যা পাশে থেকেই তিনি যুক্ত হন এই আলোচনায়।
আলোচনায় যুক্ত হওয়া উদ্যোক্তারাও পরিষ্কার করে বলেন, তারা নগদের বিপক্ষে ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটি বোঝেন এবং সবসময় এই ধরনের অপপ্রচার রোধে কাজ করে যাবেন। সেই সাথে তারা আশা করেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের একত্রিত থাকার বিকল্প নেই। একই সাথে তারা নগদের আরও অগগ্রতিতে ভূমিকা রাখার জন্য নানারকম পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে একজন উদ্যোক্তা ইব্রাহিম শেখ বলেন, দেশের মোবাইল ব্যাংকিং বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করার কৃতিত্ব নগদের। তারপরও প্রতিষ্ঠানটির বিপক্ষে বিভিন্ন ভাতা বিতরণের ব্যাপারে আজগুবি অভিযোগ কেন করা হয়?
জবাবে তানভীর এ মিশুক জানান, নগদ কাজ শুরু করার আগে সরকারের ভাতা বিতরণ প্রক্রিয়া ছিলো অস্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতাহীন। সেই সাথে গ্রাহকদের বিপুল ভোগান্তি ও অর্থ ব্যয় হতো, ভাতা পেতে। এই ক্ষেত্রে নগদ যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। ফলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কম খরচের কারনে নগদ সরকারের অনেক মন্ত্রণালয়ের ভাতা বিতরণের দায়িত্ব পেয়েছে। তবে সবক্ষেত্রেই উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কাজ পেয়েছে নগদ। আর এ কারণেই প্রতিপক্ষের অপপ্রচারের শিকার হয় প্রতিষ্ঠানটি।
এই কথোপকথনে তানভী এ মিশুক দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, নগদ-এর ই-মানি ও ফিজিকাল মানির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। নগদ যা ই-মানি ব্যবহার করে, তার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যাংকে রাখা আছে। এই তথ্যে সত্যতা হিসেবে ডকুমেন্টও উপস্থাপন করেন নগদের প্রধান নির্বাহী। এ ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে নগদ লিমিটেডের একটি টাকাও ঋণ নেই বলে প্রমাণপত্র দেখান তিনি।
নগদ বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ আনার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে কী ভাবে অবদান রাখছে এবং নগদ ব্যবহারের কারণে কিভাবে গ্রাহকের ও রাষ্ট্রের প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি সাশ্রয় হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন নগদ প্রধান।
একই সাথে নগদের অবস্থান পরিষ্কার করে তানভীর এ মিশুক বলেন, আমরা সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান ডাক বিভাগের সাথে চুক্তি করে কাজ করছি। ফলে সব সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হয় আমাদের। আগের সরকারের সাথে করেছি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে করছি, ভবিষ্যত সরকারের সাথেও করবো। আমাদের কোনো দলীয় সংশ্লিষ্টতা নেই; তবে আমরা সরকারের সাথে কাজ করে যাবো।
২০২৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ডাক বিভাগের সঙ্গে নগদের এই চুক্তি কার্যকর রয়েছে। এর ফলে নগদের মোট আয়ের ৫১ শতাংশ পাচ্ছে ডাক বিভাগ। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে যাত্রা শুরু করার মাত্র ৫ বছরের মধ্যে নগদ বিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। নগদের গ্রাহক সংখ্যা এখন সাড়ে নয় কোটির ওপরে এবং প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটি গড়ে আঠারো’শ কোটি টাকা লেনদেন করে।