শিক্ষার মান ও পরিবেশের কারণে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শুরু থেকেই বেশ সুনাম কুড়িয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)। স্বচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার ফলে অভিভাবকেরাও ছেলে-মেয়েদের এখানে ভর্তি করিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতেন। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি শুরু হওয়ার পর সেই চিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এখন ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীই পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০২১-২২ শিক্ষাবছরে স্নাতক প্রথম বর্ষে চতুর্থ ধাপে ভর্তি নিলেও ৫২ শতাংশ আসন ফাঁকা পড়ে আছে এখনো। এই অবস্থায় শূন্য আসন পূরণে প্রকাশ করা হয়েছে পঞ্চম মেধাতালিকা।
আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে স্বচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া ছিল, গুচ্ছে যাওয়ার পর তাতে যথেষ্ট ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক এ আর এম মোস্তাফিজার রহমান বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে দেশব্যাপী সুনাম ছিল। কিন্তু গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর শিক্ষার্থী ভর্তি ও বাছাই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট ঘাটতি তৈরি হয়। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতের সুনামও অনেকাংশে নষ্ট হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন আছে ১ হাজার ১০৯টি। গুচ্ছ পদ্ধতিতে চতুর্থ ধাপের ভর্তি কার্যক্রম শেষে মাত্র ৫৩৪ শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে, যা মোট আসনের ৪৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।
চতুর্থ মেধাতালিকা থেকে ভর্তি শেষে দেখা যায়, সবচেয়ে কমসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে, মাত্র চারজন। রসায়নবিজ্ঞান, সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (এসডব্লিউই) ডিসিপ্লিন এবং ফরেস্ট্রি ও উড টেকনোলজি (ফউটে) ডিসিপ্লিনে নয়জন করে ভর্তি হয়েছেন। পরিবেশ বিজ্ঞান (ইএস) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনে ৮ জন করে ভর্তি হয়েছেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনে ১০ জন এবং বাংলা ও পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনে ভর্তি হয়েছেন ১৩ জন করে শিক্ষার্থী। এ ছাড়া পরিসংখ্যান এবং নগর গ্রামীণ পরিকল্পনা (ইউআরপি) ডিসিপ্লিনে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন করে শিক্ষার্থী। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে ৩৬ জন।
এরপর ফার্মাসি এবং ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনে ৩৫ জন করে, অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনে ৩১ জন, ইংরেজি ডিসিপ্লিনে ২৬ জন ও আইন ডিসিপ্লিনে ভর্তি হয়েছেন ২৮ জন শিক্ষার্থী।
এদিকে চতুর্থ মেধাতালিকা থেকে ভর্তির জন্য নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর খালি আসন পূরণের জন্য পঞ্চম মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। পঞ্চম পর্যায়ের প্রাথমিক ভর্তি প্রক্রিয়া গত বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়েছে।
চার ধাপে ভর্তি প্রক্রিয়া চালানোর পরেও এত আসন ফাঁকা থাকা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নাসিফ আহসান বলেন, ‘এটা যেহেতু সরকারের সিদ্ধান্ত। প্রতিটি নিয়মেরই ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক থাকে। আমাদের এই নিয়মের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’