খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) খান জাহান আলী হলে রুমের লাইট বন্ধ করাকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের এক শিক্ষার্থীর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগী লিমন শেখ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী এবং তিনি খান জাহান আলী হলের (খাজা হল) ১১০ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র। গত বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে হলের কক্ষে লাইট জ্বালানো নিয়ে একই রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী জারিফের সাথে ভুক্তভোগী লিমনের কথা কাটাকাটি হয়। অভিযোগে জানানো হয়, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী জারিফ প্রায়ই গভীর রাত করে রুমে ফেরেন এবং লাইট জ্বালিয়ে ব্যক্তিগত কাজকর্ম করেন। এতে একই রুমের বাকি শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। এ নিয়ে ঘটনার আগের দিন (মঙ্গলবার) তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং কিছু সময়ের মধ্যে বনিবনা হয়ে যায়।
পরের দিন অর্থাৎ বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিট নাগাদ জারিফ এবং তার সহপাঠী তামিম ও পল রুমে ঢুকে লিমনকে ঘুম থেকে তুলে ‘কথা আছে’ বলে হলের বাইরে ডেকে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু লিমন তাদের মতিগতি ভালো না বুঝে বাইরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় এবং একপর্যায়ে খান খাজা হলে সামনের গোল চত্বরে বসে কথা বলতে রাজি হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হলের সামনের গোল চত্বরে কথা বলার একপর্যায়ে উত্তেজিত জারিফ লিমনকে বুকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয় এবং এর পরপরই আস্ত ইট তুলে মাথায় আঘাত করে। আঘাতের ফলে ভুক্তভোগীর মাথায় প্রচুর রক্তপাত শুরু হলে সে হলে ফিরতে চায়। কিন্তু তখন জারিফের বন্ধু তামিম তাকে হলে যেতে বাধা দেয় এবং অন্য কোথাও নিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তবে লিমন তৎক্ষনাৎ তার হলের রুমে গিয়ে বিষয়টি তার সিনিয়রদের জানায়। এরপর লিমনকে চিকিৎসার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভুক্তভোগীর ক্ষতস্থানে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে রাত ২টার সময় ঘুম থেকে ডেকে বাইরে নিয়ে গিয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। আমার কাছে এটি খুবই অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। তাদের দেখে মনে হয়েছে তারা আমাকে মার্ডার করার উদ্দেশ্যে এভাবে শারীরিক নির্যাতন করেছে। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন কিছু করার সাহস না পায়।’
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী জারিফ বলেন, ‘আমার টিউশান থেকে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসতে প্রায়ই দেরী হয়ে যায়। এরপর রুমে আসার পর নামাজ আদায় করার জন্য রুমের লাইট জ্বালানোর প্রয়োজন পড়ে। তবে আমার রুমমেট (লিমন এবং সুমন) দের আপত্তি থাকায় তারা রাত ১২ টার মধ্যে রুমের লাইট অফ রাখার নির্দেশ দেয়। তারা বলে ব্যক্তিগত কোনো কাজেই রুমের লাইট জ্বালিয়ে রাখা যাবে না। এনিয়ে কথা-কাটাকাটি হলে লিমন আমাকে গালাগালি করে। আমি সেটা না নিতে পেরে আমার বন্ধু তামিম ও পলকে নিয়ে লিমনের সাথে দেখা করি। তারপর আমরা খাজা চত্বরে দেখা করলে, লিমন গালাগালি করার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায়। এতে উত্তেজিত হয়ে আমি মাটির দলা মনে করে ওর দিকে ছুঁড়ে মারি। আমি বুঝতে পারিনি ওটা ইট ছিলো। ঘটনাটা এভাবে ঘটে যাবে ভাবিনি। লিমনের সাথে এমন ব্যবহারের জন্য আমি অনুতপ্ত।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান লিমন উক্ত ব্যাপারে ঘটনা ঘটার রাতেই অবগত ছিলেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে খান জাহান আলী হল প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ওই তদন্তের প্রতিবেদন পেলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।