দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগের নামে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ঘুষকাণ্ডে শিক্ষাখাতে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় তাঁকে অব্যাহতি বা বরখাস্ত না করায় অবাক হচ্ছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। চাকরিপ্রত্যাশী আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। ডিবি কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে গত রোববার রাজধানীর মিন্টো রোডে সংস্থার কার্যালয়ে ওই টাকা ফেরত দেন প্রতিমন্ত্রীর লোকজন।
এদিকে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অবহেলা, উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তারও অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ঘুষ গ্রহণকারী ও অপরাধলব্ধ টাকা হাতে পেয়ে আইন অনুযায়ী মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই। এ অপরাধ দুদকের তপশিলভুক্ত।
দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(১)(এ)(বি) ধারায় ঘুষ গ্রহণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একইভাবে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায়ও ঘুষ গ্রহণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এ অপরাধে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই আইনের ৫(১)(ডি) ধারায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অপরাধে শাস্তির বিধান রয়েছে।
সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অপরাধীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ নিয়েছেন। সূত্র জানায়, ঘুষ নেওয়ার কারণে প্রতিমন্ত্রীসহ ঘুষ গ্রহণকারীরা আইনের আওতায় আসবেন। লাভবান হওয়ার জন্য যারা ঘুষ দিয়েছেন, তারা দণ্ডবিধির ১৬৫(ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এদিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের নামে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পরও দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা না করে কমিশন আইনের প্রতি অবজ্ঞা করেছে। ওই অভিযোগে যে কোনোভাবেই হোক প্রতিমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন ছিল। যারা চাকরি দেওয়ার নামে ঘুষ নিয়েছেন আর যারা ঘুষ দিয়েছেন– উভয়কেই গ্রেপ্তার করা দুদকের দায়িত্ব।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বিষয়ে আগে থেকে সরকারের কাছে গোয়েন্দা তথ্য থাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবার তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। দুদক আইনের ১৭(গ) ধারায় দুদককে স্বউদ্যোগে যে কোনো অভিযোগ অনুসন্ধানের ক্ষমতা দেওয়া হলেও কমিশন প্রতিমন্ত্রীর ব্যাপারে আইনের এ নির্দেশনা পালন করেনি। কমিশন বরাবরই বড় কোনো অভিযোগের ব্যাপারে চেয়ে থাকে হাইকোর্টের দিকে। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলে তবেই কমিশনের অনুসন্ধান শুরু হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবৈধ লেনদেনের বিষয় প্রতিমন্ত্রীর অজানা থাকার কথা নয়। ঘুষ লেনদেনের পুরো দায়টাই নিঃসন্দেহে প্রতিমন্ত্রীর। ঘুষ গ্রহণে তাঁর অংশগ্রহণ, তাঁর যোগসাজশ এবং ঘুষের ভাগীদার প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন কিনা, এটি অনুসন্ধান করা জরুরি। একই সঙ্গে যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।