গাইবান্ধার চরাঞ্চলে প্রাথমিকের পর ঝরে পড়ে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

গাইবান্ধার চরাঞ্চলে প্রাথমিকের পর ঝরে পড়ে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীবেষ্টিত ১৩টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের চার শতাধিক চরে ছয়টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও এখনো গড়ে ওঠেনি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করা মোট শিক্ষার্থীর ৭০ এবং মাধ্যমিক শেষে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং বেসকারি সংস্থার সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের বন‍্যায় জেলার চারটি উপজেলার নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীভাঙনের কবলে পড়ে ভেঙে যায়। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় পাঁচটি, ফুলছড়ি উপজেলায় একটি, সাঘাটা উপজেলায় দুটি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় একটি রয়েছে। এর মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

গাইবান্ধা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের (জিইউকে) তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধা, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর ৪৪টি নদীবেষ্টিত চার শতাধিক চরে প্রায় ১৬ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। অর্থাৎ এই তিন জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ বসবাস করে চরাঞ্চলে। এর মধ্যে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী সংখ্যা অন্তত ৩ লাখ ৪৫ হাজার। এসব চরাঞ্চলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থীর জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র ছয়টি। এসব বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে। চরাঞ্চলে স্থাপিত এসব বিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে থাকে তিন হাজার শিক্ষার্থী। কিছু অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের শিশুকে মূল ভূখণ্ডের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করার সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলেও বেশির ভাগ পরিবারের শিশুর আর্থিক সমস্যার কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। আবার চরের মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করার পর উচ্চ মাধ্যমিক বা কলেজ না থাকায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীরা কলেজ পর্যায়ে ভর্তি হতে না পারায় পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র চরে গণ উন্নয়ন কেন্দ্র নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানি এবং ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ও এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের ৩০টি চরে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। এ বিদ্যালয়টিই চরের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে চরের শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তবে চরগুলোর দূরত্ব ও বন্যাকালীন যোগাযোগ সমস্যার কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েও অষ্টম শ্রেণী শেষ করতে পারে না।

ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান জানান, এই ইউনিয়নের একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, সেটিও আবার ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে।

এ কারণে অভিভাবকের আগ্রহ থাকলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ না থাকায় পঞ্চম শ্রেণী পাস করেই শিশুদের পড়ালেখা বন্ধ হয়।

ফুলছড়ি উপজেলার বাড়ইকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রউফ বলেন, ‘শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।’

ফুলছড়ি উপজেলার ঝানঝাইড় কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রত্না আকতার বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণীতে যারা ছিল তারা কিন্তু হাইস্কুলে ভর্তি হতে পারত। এ বিষয়ে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার মনে হয় এবার কোনো শিক্ষার্থী সম্ভবত হাই স্কুলে ভর্তি হয়নি। পাশাপাশি উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রবণতা অনেক বেশি।’

গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান ও উন্নয়ন গবেষক এম আবদুস সালাম জানান, চরের স্থায়িত্ব ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা না হলে দেশের শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন বাধা হয়ে থাকবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিশু ও পরিবারের ওপর।

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, ‘এবারের বন‍্যায় জেলার চারটি উপজেলার নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে ভেঙে গেছে। এ জেলায় আমি নতুন এসেছি। সব চরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বিষয়টি জানাতে পারব।’

সূত্র: বণিক বার্তা

আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - dainik shiksha আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবার ভর্তির লটারিও স্থগিত করলো সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল - dainik shiksha এবার ভর্তির লটারিও স্থগিত করলো সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে জয়পুরহাটের আইএইচটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে জয়পুরহাটের আইএইচটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ৮ ডিসেম্বর - dainik shiksha এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ৮ ডিসেম্বর মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! হা*মলা-ভা*ঙচুরের ঘটনায় মা*মলা করবে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ - dainik shiksha হা*মলা-ভা*ঙচুরের ঘটনায় মা*মলা করবে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগকে গণ*ধোলাই দিয়ে থানায় দিতে বললেন ওসি - dainik shiksha ছাত্রলীগকে গণ*ধোলাই দিয়ে থানায় দিতে বললেন ওসি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044069290161133