পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য চালু করা গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নিয়ে সমালোচনা ও অনাগ্রহ বেড়েই চলেছে। এর আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। সম্প্রতি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও (বশেমুরবিপ্রবি), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) চাইছে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যেতে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অত্যাসন্ন হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে দোটানা তৈরি হয়েছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যেও।
যদিও দূর-দূরান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার ভোগান্তি কমাতে ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের খরচ কমানোর কথা বলে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া শুরু হয়। তবে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষেই এ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়।
গুচ্ছ ভুক্ত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, এ পদ্ধতির পরীক্ষায় নষ্ট হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা। ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতেই লেগে যায় দীর্ঘ সময়। তাদের দাবি, যেসব উদ্দেশে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল সে উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এ পদ্ধতি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুচ্ছের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২১ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য উপাচার্যের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি থেকে বের হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী সোমবার আমাদের ভর্তি কমিটির মিটিং রয়েছে। মিটিংয়ে ভর্তির সার্কুলারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে যাওয়ায় নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে এ পদ্ধতির ভবিষ্যত নিয়ে। এর আগে বিগত বছরগুলোতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার জন্য আন্দোলন করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এবারো গুচ্ছে না যাওয়ার পক্ষেই সিদ্ধান্ত তাদের।
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই তো ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে (গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে)। সাধারণ সেন্টিমেন্ট হলো- গুচ্ছে থাকব না। এবার একটু পরিবেশ ভিন্ন, সে জায়গায় হয়তো সবাই চাইবে যে গুচ্ছ থেকে বের হতে। সময় হলেই সেটা বোঝা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। ভর্তি কমিটির মিটিং না ডেকে এ বিষয়ে এখনই মতামত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে অতীতের স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষায় ফেরৎ যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষকরাও। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবির বলেন, আমাদের শিক্ষকরা সর্বসম্মতিক্রমে অতীতের স্বতন্ত্র পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় ফেরত যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। আমরা সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও জানিয়েছি। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, গতবছর আমাদের সিদ্ধান্ত ছিলো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও যদি গুচ্ছের বাইরে যায়, তাহলে আমরাও যাব। এবারো আমাদের সিদ্ধান্ত একই। ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে না থাকলে আমাদেরও থাকার ইচ্ছে নেই।
ব্যতিক্রম নয় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষকরাও। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়া বলেন, আমরা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় সব শিক্ষকের উপস্থিতিতে গুচ্ছে না থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাশাসনকেও আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা বেশ কয়েকমাস হয়নি৷ ওখানেও বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
এদিকে এখনো গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় দোটানায় রয়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, গুচ্ছ পদ্ধতি থাকে কি-না তা দ্রুতই জানানো উচিত। তাহলে আমরা সেভাবে ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে পারব। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী অন্তর হোসেন বলেন, একেক বিশ্ববিদ্যালয় একেক সিস্টেমে ভর্তি পরীক্ষা নেয়। প্রশ্নের প্যাটার্নও ভিন্ন। কোন বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকবে এসব সিদ্ধান্ত দ্রুত জানানো উচিত। সাথে ভর্তি সার্কুলার ও প্রশ্ন প্যাটার্ন দ্রুত জানালে আমাদের জন্য ভালো হয়।
পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনার কথা বলছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ইউনিভার্সিটিগুলো যেভাবে চিন্তা করবে আমরা সেটাকে ধারণ করে সেভাবে অগ্রসর হবো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা আশা করব সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ছাত্রদের বিষয়গুলো- যাওয়া-আসা, খরচের বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেবে। শিক্ষার্থীদের যেন ভোগান্তি না হয়। তাদের জন্য যেটা ভালো হয় সেটা গুরত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়গলো যেটা চায়, আমাদের কাজ হলো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।