গুচ্ছের পক্ষে মতামত দেয়া নিয়ে বিতর্কের জেরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এক শিক্ষককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ তম বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল সভায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর উপাচার্যের সভাকক্ষের সিসি টিভি ফুটেজ গায়েব করে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একাডেমিক কাউন্সিল সভায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া এবং কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল কাদের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় থাকার পক্ষে মতামত দিলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান ও সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
অভিযোগ উঠেছে, বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে অধ্যাপক আব্দুল কাদেরকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান, সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজুল ইসলাম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আকরাম উজ্জামানসহ কয়েকজন মিলে অপর পাশ থেকে উঠে গিয়ে মারধর করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার তাদের শান্ত করতে গিয়েও ব্যর্থ হন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, সে একজনও যদি হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো। একাডেমিক কাউন্সিল সভায় আমি একটু ভিন্ন মত দিয়েছি, ন্যায্য কথা বলেছি বলেই এতো শিক্ষকের মাঝে আমার গায়ে হাত তুলেছে। এ বিষয়ে আমি আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো। আইন বলতে তো ফৌজদারি আইনই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনও তো আছে।
সভায় উপস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই না। শুধু এ টুকু বলবো ভালো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
অভিযুক্ত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে এম লুৎফর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এখানে মারামারির ঘটনা ঘটেনি। সে খুব উত্তেজিত ছিলো। বসতে বলার পরও বসতে চাচ্ছিলেন না। কয়েকজন তার ঘাড়ে চাপ দিয়ে বসিয়ে দিয়েছি। আর বিষয়টা মিটমাট হয়ে গেছে। আমরাও দুঃখ প্রকাশ করেছি, সেও সরি বলেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সদস্য সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড আবুল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মারধরের এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কাদের স্যার একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলেন। একাডেমি কাউন্সিলে সে টেবিল থাপড়িয়ে কথা বলতে পারেন না। পরবর্তীতে আমরা কয়েকজন গিয়ে তাকে বসিয়ে দিয়েছি।
অভিযুক্ত আরেক শিক্ষক প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ মাসুদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষকদের মাঝে এমন আচারণ তিনি করতে পারেন না। তাকে শুধু বোঝানো হয়েছে কিন্তু মারধর করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। সে উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলো, তখন তাকে হাত ধরে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
সিসি টিভি ফুটেজ গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আইটি দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি। টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি তার।
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড ইমদাদুল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে আমাদের সামনে এমন একটা ঘটনা ঘটবে তা কাম্য ছিলো না। শিক্ষকদের এমন ঘটনা দেখার জন্যও প্রস্তত ছিলাম না। এর জন্য আমি লজ্জিত, দুঃখিত, মর্মাহত।
গুচ্ছ ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, জগন্নাথ নিজেদের সর্বসম্মতিক্রমে ও সরকারের সিদ্ধান্তে গুচ্ছে এসেছে। শিক্ষামন্ত্রী যেহেতু বলেছে আগামী বছর থেকে বুযেট ঢাবিসহ সবার একসাথে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে। আমরা একটা সেশন অপেক্ষা করতে পারতাম। পরের বার ঢাবি বুয়েট না আসলে আমরা সহজেই সরে আসতে পারতাম। এ নিয়ে এতো কাহিনী, মারামারি দরকার হতো না।