গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রমে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। কম নম্বরধারীকে ভর্তি, ওয়েবসাইটে মেধা তালিকা প্রকাশ না করা, গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মেধা তালিকায় ওপরে থাকার পরও ভর্তি না নেওয়া, পোষ্য কোটায় ছেলেমেয়ের পরিবর্তে ভাইবোন ভর্তি করা, অকৃতকার্য শিক্ষাার্থী ভর্তি এবং গুচ্ছের নির্দেশনার পরও ভর্তি কার্যক্রম চালু রাখার মতো নজিরবিহীন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি অনেক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেও সমাধান মেলেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তির অনিয়ম নিয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও কম নম্বরধারী, অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ও পোষ্য কোটায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ভাইবোনকে ভর্তি করার মতো এত অনিয়মের কথা শোনা যায়নি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পাওয়া ইনকিয়াদ হক কবির অংশগ্রহণ করেন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায়। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪৭ দশমিক ৫ নম্বর পান তিনি। নিয়ম মেনে আবেদন করেন দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে এর কোনোটিতেই পড়ার সুযোগ হয়নি তার। সর্বশেষ জাতীয় কবি কাজী

নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণবিজ্ঞপ্তিতে ডাক পেলেও সেখানে ভর্তির সুযোগ মেলেনি। তবে ইনকিয়াদের চেয়েও কম নম্বর পেয়ে সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন এমন দুজন শিক্ষার্থীর খোঁজ মিলেছে। গুচ্ছে ৪১ নম্বর পেয়েও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় সরকার এবং নগর উন্নয়ন বিভাগে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছেন বলে জানা যায়। ওই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে আবেদন করা আবু রাইহানও হয়েছেন ভর্তিবঞ্চিত। মেধা তালিকায় ওপরে থেকেও ভর্তির সুযোগ মেলেনি আবু রাইহানেরও। কম নম্বর পেয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ও বেশি নম্বর পেয়েও বঞ্চিত হওয়ায় তাই তারা প্রশ্ন তুলেছেন ভর্তি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে। বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একই নিয়মে তুলনামূলক কম নম্বর পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে অন্যরা। এ ছাড়া ভর্তির নির্দেশিকা, মাইগ্রেশন তালিকা,

গণবিজ্ঞপ্তিতে সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ না করেই পছন্দের শিক্ষীর্থীদের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইনকিয়াদ হক কবির বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতিবহির্ভূত কাজ হয়েছে। কম নম্বর পেয়েও ভর্তি হয়েছে অনেকে। গণবিজ্ঞপ্তিতেও অফিসিয়ালি ফলাফল জানানো হয়নি। বেশি নম্বর পেয়ে গণবিজ্ঞপ্তিতে উপস্থিত থেকেও আমাকে রাখেনি। বেশি নম্বরপ্রাপ্ত আরও অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হুমায়ুন কবীর মুঠোফোনে বলেন, শুধু স্কোর বেশি হলেই হয় না। প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব কিছু শর্ত থাকে। যাদের শর্ত পূর্ণ হয় তাদের কাছে অনলাইনে মেসেজ চলে যায়। সেই অনুযায়ী ভর্তি করা হয়। এ সময় ভর্তির মাইগ্রেশনসহ সব বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় কিনা এবং গণবিজ্ঞপ্তির মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো প্রকাশ করার কথা। আর মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ কথা বলেই মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি।

তবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের প্রধান মো রাকিবুল ইসলাম জানান, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগে ভর্তির জন্য আলাদাভাবে কোনো স্কোরের শর্ত ছিল না। সার্বিক বিষয় জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, বেশি নম্বরধারী ব্যতিরেকে কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ নেই। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে শুধু মেসেজের মাধ্যমে জানানোটা বৈধ প্রক্রিয়া নয়।

এদিকে পোষ্য কোটার কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের ভাইবোনকে ভর্তি করিয়েছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পোষ্য কোটায় ঔরসজাত সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী সুযোগ পাওয়ার কথা থাকলেও পোষ্য কোটার নামে ভাইবোনকে ভর্তি করা হয়েছে গত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায়। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা কর্মকর্তাদের ভাইবোন। এই ভাইবোন কোটায় ভর্তি করা হয়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। এদের মধ্যে রয়েছেন ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় ৩০ নম্বরের কম পেয়েও ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়েছেন জাকারিয়া রহমান। ভর্তির তথ্য বলছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদভুক্ত অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুবাইদুর রহমানের ভাই। বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওই শিক্ষক ও ছাত্র। পাস না করেও ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী জাকারিয়া রহমান বলেন, জুবাইদুর রহমান স্যার আমার নিজের ভাই। আমি সরাসরি ভাইভা দিয়ে ভর্তি হইছিলাম। আর কিছু জানি না। ভাইভা দিয়েছিলাম তারপর ভর্তি হয়েছি। এ বিষয়ে শিক্ষক জুবাইদুর রহমান বলেন, জাকারিয়া আমার ছোট ভাই। পাস মার্ক কত, কীভাবে ভর্তি করল বিশ্ববিদ্যালয়Ñ এটা ভর্তি কমিটি জানে। এ সময় পোষ্য কোটায় ভাইবোন অন্তর্র্ভুক্ত হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি কমিটির ওপর দায় চাপিয়ে বলেন, এখানে আমার কোনো হাত নেই। পোষ্য কোটায় আবেদন করেছিলাম, তার পর ভর্তি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি কমিটির সদস্য ও কলা অনুষদের ডিন ভূইয়ান আশিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটার নিয়ম হলো নিজ সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী। এর বাইরে আর কারও সুযোগ নেই। তবে এবার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইবোন কোটা আলোচনায় এসেছে। নিয়মের বাইরে কিছুই হবে না বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

পোষ্য কোটায় ১৪ জনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘এটি ভুল তথ্য। আমরা টোটালও ১৪ জন ভর্তি করি নাই।’ তিনি এই তথ্যটি ওই শিক্ষাবর্ষের ফলাফল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহজাহান থেকে ভেরিফাই করার জন্য বলেন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি ফলাফল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহজাহানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পোষ্য কোটায় মোট ১৫ জনকে ভর্তি নিয়েছি। এ ছাড়া পোষ্য কোটায় অকৃতকার্য ও ভাইবোনদের ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, একজন ২৯.৭৫ পেয়েছিল তাকে ভর্তি করা হয়েছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির ক্ষেত্রে গুচ্ছ কমিটির নির্দেশনায় কমপক্ষে ৩০ নম্বর পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, পোষ্য কোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এ সময় ভর্তি কমিটির প্রধান কে ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নাম বলেন। এ বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, গুচ্ছে পাস নম্বর ৩০ নির্ধারণ করা হয়। অকৃতকার্যদের ভর্তির সুযোগ নেই। পোষ্য কোটায় ভাইবোনদের কোনো স্থান নেই।

২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শূন্য আসন পূরণ করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। তবে এই সিদ্ধান্ত না মেনে শূন্য আসন খালি থাকাসাপেক্ষে গত ২০ মার্চ শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এক্ষেত্রে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য আসন প্রকাশ সেগুলোতে ভর্তি নিতে আদালতের শরণাপন্ন হয় শিক্ষার্থীরা।

আদালত এক মাসের মধ্যে শূন্য আসন প্রকাশ করে ভর্তির নির্দেশ দেন এবং গত ৬ মে এই আদেশের এক মাস পূর্ণ হয়। তবে আদালতের নির্দেশ আমলে নেয়নি গুচ্ছ এমনটি দাবি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের। ভর্তিবঞ্চিত শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘আমরা অধিকার আাদায়ের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হই। তবে আদালত নির্দেশ দিলেও গুচ্ছে ফাঁকা আসন প্রকাশ করা হয়নি। এখন গুচ্ছ কমিটির কাছে আমাদের একটাই দাবি, ফাঁকা আসন প্রকাশ করে আমরা যারা যোগ্য তাদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হোক।

গুচ্ছ কমিটির দাবি, আদালতের নির্দেশ মানা হয়েছে। কমিটি বলছেÑ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য নিয়ে আসন ফাঁকা না থাকায় ভর্তি বন্ধ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে গুচ্ছ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, রিটের বিষয়ে আইনিভাবে আমরা জবাব দিয়েছি। তা ছাড়া গুচ্ছের আসন ফাঁকা না থাকায় ভর্তি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে কেউ নির্দেশনার বাইরে কাজ করলে তা বৈধ হয়নি।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034010410308838