কলম্বীয় সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকাশক ও রাজনীতিবিদ গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, যিনি গাবো নামেও পরিচিত ছিলেন। এ বিশ্ববিখ্যাত কলম্বীয়, স্প্যানীয়ভাষী ঔপন্যাসিক বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক হিসেবে আবির্ভূত হন।
জীবনের শেষ দুই যুগ তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচেছিলেন। এ সময় তার লেখালেখি কমে আসে; জনসংযোগ ও ভ্রমণ হয়ে পড়ে সীমিত। এমনকি ২০০২-এ আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড লিভিং টু টেল আ টেইল প্রকাশের পর পরিকল্পিত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় খণ্ড আর রচনা করা হয়ে ওঠেনি। তিনি দুরারোগ্য লিম্ফেটিক ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে তিনি স্মৃতিবিনষ্টিতে আক্রান্ত হন। মার্কেসের জন্ম উত্তর কলম্বিয়ার নিরক্ষীয় অঞ্চলের ক্যারিবীয় উপকূলের পার্বত্য এলাকার ছোট্ট শহর আরাকাতাকায় ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মার্চ। নানা-নানির কাছে বেড়ে ওঠেন।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে আইন পড়াশোনা বন্ধ করে মার্কেস তার পেশাজীবন শুরু করেন আঞ্চলিক সংবাদপত্রে সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এ সময় তিনি অপ্রচলিত লেখক এবং সাংবাদিকদের দল হিসেবে পরিচিত ‘বারানকিইয়া’ গ্রুপে যোগ দেন। সাহিত্যবিশারদদের মতে, তিনি হোর্হে লুইস বোর্হেস ও হুলিও কোর্তাসারের সঙ্গে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দক্ষিণ আমেরিকান কথাসাহিত্যিক। একই সঙ্গে জনপ্রিয় এবং মহৎ লেখক হিসেবে চার্লস ডিকেন্স, লেভ তলস্তয় ও আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সঙ্গে তার নাম এক কাতারে উচ্চারিত হয়। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার প্রদানের সময় সুইডিশ একাডেমি এমন মন্তব্য করেছিল যে, তার প্রতিটি নতুন গ্রন্থের প্রকাশনা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মতো। জনমানুষের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে তিনি ছিলেন বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল প্রবাদপ্রতিম। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে সাংবাদিকতার কাজে রোমে যান মার্কেস। পরবর্তী সময়ে একজন বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে প্যারিস, নিউইয়র্ক, বার্সেলোনা, মেক্সিকোতে জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটান তিনি। তার সবচেয়ে সফল উপন্যাস ‘নিঃসঙ্গতার এক শতাব্দী’ সারা বিশ্বে প্রায় ১০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়। এ উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে রোমুলো গ্যালাওস পুরস্কার জিতে নেন। এ ছাড়া মার্কেসের নন্দিত রচনাগুলোর মধ্যে ‘লিফ স্টর্ম অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’, ‘নো ওয়ান রাইটস টু কর্নেল’, ‘অ্যান ইভিল আওয়ার’, ‘বিগ মামাস ফিউনারেল’, ‘ইনোসেন্ট এরেনদিরা অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’, ‘দ্য অটাম অব প্যাট্রিয়ার্ক’, ‘ক্রনিকল অব অ্যা ডেথ ফোরটোল্ড’ এবং ‘লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা’ প্রসিদ্ধ।
মার্কেসকে দক্ষিণ আমেরিকান কিছু বৈপ্লবিক দলের প্রতি সহানুভূতিশীল মনে করা হয়। ছিলেন কলম্বিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও একজন কঠোর সমালোচক। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল তিনি মারা যান।