দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক: দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প হয় অনেকটাই অপরিকল্পিতভাবে। কাজ শেষে মূল্যায়নে উঠে আসে নানা অসংগতি। নোয়াখালীতে তেমন ঘটনাই ঘটেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভবন নির্মাণে। প্রকল্পের কাজ শেষে দেখা গেছে, গ্যারেজের চেয়ে গাড়ি বড়। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কর্মকর্তারা সমাপ্ত প্রকল্পের মূল্যায়নে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, তাদের যে গ্যারেজ করা হয়েছে, তার চেয়ে তাদের গাড়ি বড়। এ সমস্যার সমাধানের নির্দেশ দিয়ে এসেছে আইএমইডি।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের জুনে ‘নোয়াখালী ও হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের জন্য অফিস ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চালু হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে দুই বছর পিছিয়ে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে। প্রাক্কলিত ব্যয় ১১ কোটি ১৬ লাখ টাকা ধরা হলেও ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর মূল্যায়ন করে থাকে। এ প্রকল্পের মূল্যায়ন করেন আইএমইডির উপপরিচালক নাদিরা আখতার। পরিদর্শনের কাজ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে হলেও মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।
ওই সময় নোয়াখালী অফিসের উপপরিচালক ছিলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি পরিদর্শন কর্মকর্তার কাছে বলেন, কাজের মান ভালো, ডিপিপি অনুযায়ীই হয়েছে। তবে ভবনের গাড়ির গ্যারেজ ডিপিপি অনুযায়ী হলেও তাদের গাড়ির আকার গ্যারেজের চেয়ে বড়। ফলে গ্যারেজ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। সোলার বিদ্যুৎ বসানো হলেও সেটি কাজ করছে না।
আইএমইডি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের পিডব্লিউডিকে নির্দেশ দেন গাড়ির গ্যারেজের সমস্যার সমাধান করার জন্য। সোলার সমস্যারও সমাধানের কথা বলেছেন।
গ্যারেজের সমস্যার সমাধান হয়েছে কি না, জানতে কথা বলা হয় দুদক নোয়াখালী অফিসের বর্তমান উপপরিচালক মো. ফারুক আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্যারেজ সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে সেটি ভবনের ভেতরে নয়। বাইরে আলাদা করে একটি টিনশেড গ্যারেজ করা হয়েছে।
সোলার সমস্যার সমাধান হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি কয়েক মাস। এ সমস্যার সমাধান হয়েছে কি না আমি জানি না।’
ওই সময় হবিগঞ্জ অফিসও পরিদর্শন করা হয়। হবিগঞ্জ অফিসের উপপরিচালক কামরুজ্জামান কর্মকর্তাদের বলেন, ‘কাজ ঠিকমতো হলেও অফিসের রুমের বারান্দায় সেফটি গ্রিল মাত্র দুই ফুট উচ্চতার, ওপরের অংশ ফাঁকা। এতে অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।’
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প শেষ হলেও দুটি অফিস ভবন নির্মাণের এক্সটার্নাল অডিট শেষ হয়নি। নোয়াখালী অফিস নির্মাণে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারনাল অডিট হলেও হবিগঞ্জ অফিসে এ-সংক্রান্ত কোনো অডিট হয়নি। দ্রুত অডিট শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে আইএমইডি।
আইএমইডি প্রতিবেদনে জানায়, প্রকল্পটির কাজে কোনো ব্যয় বাড়াতে হয়নি, সেটি প্রশংসনীয়। তবে প্রকল্পটি একবার সংশোধন করতে হয়েছে। এ ধরনের প্রকল্প সংশোধন ছাড়াই বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নোয়াখালী ও হবিগঞ্জ জেলায় প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ভবন দুটি ও অন্য স্থাপনাগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের অধীনে নোয়াখালী ও হবিগঞ্জ জেলায় ছয়তলা ফাউন্ডেশনসহ দোতলা অফিস ভবন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের জন্য ডিপিপিতে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়। দোতলা অফিস ভবন নির্মাণের জন্য নোয়াখালী জেলায় ২৪ শতাংশ ও হবিগঞ্জ জেলায় ৩৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের অধীনে নোয়াখালী জেলায় ছয়তলা ফাউন্ডেশনসহ দোতলা অফিস ভবন নির্মাণের জন্য ডিপিপিতে ৪ কোটি ১১ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়। ছয়তলা ফাউন্ডেশনসহ ১ হাজার ৪৪৯ বর্গ মিটারের দোতলা অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ২২টি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। এগুলোকে সমন্বিত জেলা কার্যালয় বলা হয়। দুদকের কাজের ব্যাপকতা বিবেচনায় অফিসগুলোতে অনেক কাজ সম্পাদন করতে হয়। কিন্তু অবকাঠামোগত সুবিধা, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তা প্রভৃতির অভাবে আশানুরূপভাবে অফিসগুলোতে কাজ করা সম্ভব হয় না। সমন্বিত জেলা কার্যালয়গুলোর অনেকগুলোর নিজস্ব অফিস ভবন নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ি বা জেলা প্রশাসন ভবনের এক বা একাধিক কক্ষে দুদকের কার্যালয় রয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে আঞ্চলিক পর্যায়ে দুদকের নিজস্ব ভবন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের আওতায় নোয়াখালী ও হবিগঞ্জ জেলায় নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।