শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সোম ও মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
অডিও ফাঁসের পৃথক ঘটনায় হিসাব নিয়ামক দপ্তরের কর্মচারী আহমদ হোসেন, বিজ্ঞান ওয়ার্কশপের সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী হাদী মো. রশিদ এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কর্মকর্তা সেলের নিম্নমান সহকারী মানিক চন্দ্র দাশকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।
এছাড়া উপাচার্য শিরীণ আখতারের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীনকে পদাবনতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।
উপাচার্য দপ্তরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিনকে ‘শিক্ষক নিয়োগের ফাইল হারানোর দায়ে’ পদাবনতির সুপারিশ করা হয়েছে।
সিন্ডিকেট সদস্য নঈম হাসান আওরঙ্গজেব চৌধুরী বলেন, ‘কয়েকটি ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে এই সভায়।’
‘নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে’ আহমদ হোসেন ও খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীনসহ আরও কেউ জড়িত কিনা, তা জানতে এ দুজন এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে ফৌজদারি মামলা করারও সিদ্ধান্ত দিয়েছে সিন্ডিকেট।
গত বছরের অগাস্টে একটি অডিও কথোপকথনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কর্মকর্তা সেলের নিম্নমান সহকারী মানিক চন্দ্র দাশের বিরুদ্ধে।
তার দাবি ছিল, ব্যক্তিগত কাজে তিনি ওই টাকা নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় দুই দফা তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সিন্ডিকেট সদস্য নঈম হাসান আওরঙ্গজেব চৌধুরী বলেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ওই অডিও ফাঁসের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভিত্তিতে মানিক চন্দ্র দাশকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট।
অন্যদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্যের সেসময়ের ব্যক্তিগত সহকারী (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন ও আহমদ হোসেনের সঙ্গে তিনজন নিয়োগপ্রার্থীর ফোনালাপ ফাঁস হয়।
নঈম হাসান আওরঙ্গজেব চৌধুরী বলেন, ওই ঘটনায় আহমদ হোসেনের সম্পৃক্ততা ‘সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায়’ তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
“আর খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীনের কথোপকথন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা হিসেবে যথাযথ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কনডাক্ট অমান্য হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ কারণে তাকে পদাবনতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এক প্রার্থীর কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল কর্মকর্তা হাদী মো. রশিদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হাদী মো. রশিদকে বরখাস্তের সুপারিশ করে সিন্ডিকেট।
এছাড়া ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের নিয়োগপ্রার্থীদের ফোন নম্বর, ঠিকানাসহ জীবনবৃত্তান্ত সংক্রান্ত ফাইল উপাচার্য দপ্তর থেকে হারিয়ে যাওয়ায় ফাইল কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিনকে উপাচার্য দপ্তর থেকে বদলির সিদ্ধান্ত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।