ঘুষের রেট নির্ধারণ করে দেওয়া পিরোজপুরের নাজিপুর উপজেলার সেই এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচবি আব্দুস সবুর মণ্ডল এ সংক্রান্ত আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলার পর তাকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা উচিত বলে মনে করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গত জুলাই মাসে পিরোজপুরের নাজিরপুরে জমির নামজারি করার জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা ছয় হাজার টাকা ঘুষ নেবেন, এমন রেট নির্ধারণ করে দিয়েছেন এসিল্যান্ড বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে করা ওই সভার অডিও রেকর্ড সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
এর পরপরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হয়। তারই ভিত্তিতে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করেন। এরপর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাস মন্ত্রণালয়। এর আগে গত এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জীব দাশ। সাময়িক বরখাস্ত থাকা অবস্থায় এ কর্মকর্তা খোরপোষভাতা পাবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন : নামজারিতে ঘুষের টাকা নির্ধারণ : এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি
যা ছিল ঘটনা:
নতুন জমি কেনার পর গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হচ্ছে সেই জমির নামজারি করা। পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে নামজারি বা নাম খারিজ বলে। এটা করতে সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা।
নাম খারজের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।
এ সংক্রান্ত কাজে অবৈধভাবে কত টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে, তারই এক ধরণের নির্দেশনা তার অধস্তনদের দিয়েছিলেন এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান। বিধি বাম, সেই নির্দেশনার অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ধরা পড়ে গেছেন।
এসিল্যান্ড তার নির্দেশনায় বলেছিলন, ‘এখান আমাকে পরিষ্কার করে একটি বিষয় আপনাদের অবগত করতে হবে, আমি ইউএনও স্যারের কাছ থেকে চাপে আছি। ধরেন, আমার অফিস থেকে নামজারিতে অতিরিক্ত আদায় বন্ধ করা হলো। আপনারা পার কেইস যে ডিল করেন, এটা আপনারা নিশ্চিত করবেন কীভাবে যে আপনারা টাকা নিচ্ছেন না। আপনাদের মতামত শুনি, আপনারা কী চান? কত করে নেওয়া হোক? খোলামেলা আলোচনা করেন, মতামত দেন। সবাই এখানে উপস্থিত আছেন। যদি বলেন স্যার, আপনি যদি না করে দেন, তাহলে নিশ্চিত করব আমরা কোনো টাকাপয়সার লেনদেন করব না। কিন্তু বাস্তবে এটা কখনো হবে না। আপনারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। কাজ করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মানে খরচ আছে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয় আছে, যেটার কারণে এটা নিতে হচ্ছে বা নিচ্ছেন। এটা কমবেশি সবাই নিচ্ছে। কিন্তু এটা যে এই অফিসে দেওয়া ইইতেছে বিধায় আপনারা এটাকে বড় আকারে একটা কিছু করবেন, এই ধরনের অভিযোগ আসলে আমার জন্য বিব্রতকর।’
ওইদিনের সভায় এসিল্যান্ড আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার সাথে শাখারীকাঠী ইউনিয়ন তহসিলদার মো. শাখাওয়াত সাহেবের সব বিষয়ে কথা হয়েছে। ধরেন, একজনের দুই একর জমি আছে, তাঁর কাছ থেকে নামজারির ক্ষেত্রে কত টাকা নেবেন? যেহেতু তাঁর জমি বেশি, তাঁর কাছ থেকে বেশি টাকা নেবেন, এ রকম।’
এমন কথার উত্তরে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘টাকা সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। যেমন পাঁচ হাজার ছিল, সেখানে আপনি বললে, চার হাজার টাকায় নামিয়ে আনতে পারি। আপনি যেভাবে বলবেন স্যার।’
তখন এসিল্যান্ড বলেন, ‘ধরেন, আমি চার হাজার নির্ধারণ করে দিলাম। আপনারা কত ডিল করবেন? ক্লিয়ার কথা বলেন। প্রয়োজনে কথাগুলো রেকর্ড থাকবে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সর্বোচ্চ ৬-এর বেশি আমরা নেব না।’
তখন এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান আবার বলেন, ‘ছয় হাজার মানে ছয় হাজারই। ছয় হাজার ১০০ টাকা হলে পরবর্তী সময়ে আমি ব্যবস্থা নেব।’