দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: বাংলাদেশের উপকূলে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রূপ নিয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। এটি রোববার বিকেল থেকে মধ্যরাতের মধ্যে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে উপকূলের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। সাগর রয়েছে উত্তাল। শনিবার রাতে মোংলা ও পায়রা বন্দরে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, যেসব এলাকার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করবে, সেখানে ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এতে করে উপকূলজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
এদিকে উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোতে চলাচল করা নৌযানের ব্যাপারে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এমন নির্দেশনা আসেনি। রেড অ্যালার্ট-১ জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বলা হচ্ছে, প্রবল শক্তি নিয়ে ‘রেমাল’ উপকূলে ছোবল হানতে পারে। এরপর সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলার দিকে ফণা তুলতে পারে। ক্ষত তৈরি করতে পারে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকায়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কাও রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারের তরফ থেকে এরইমধ্যে বেশ কিছু প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
উপকূলের ছয় জেলাকে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সেখানে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এরই মধ্যে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ পাঠানো শুরু করেছে। আগাম সতর্কবার্তা প্রচারসহ আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন ও প্রস্তুতের কাজ করছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এ ছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন (এএফডি), ফায়ার সার্ভিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রণকক্ষ খুলেছে। প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সওজ, এলজিইডিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থাকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ভারতেও নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ভারতের নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)।
ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘রেমাল’ নামটি ওমানের দেওয়া, এর অর্থ বালু। ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে উপকূলে। রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টার মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে এটি ছোবল দিতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে এটি স্থলভাগ অতিক্রম করলে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার থাকবে, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। সঙ্গে থাকবে বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস। ফলে যেসব এলাকার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়বে, সেখানে থাকবে একটা ধ্বংসাত্মক প্রভাব। খুলনার সুন্দরবন থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সব উপকূলীয় জেলা এর আওতায় পড়বে।
ছয় জেলা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ
শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় প্রতিমন্ত্রী মো. মহিব্বুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা– এ ছয় জেলা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সভায় কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো হলো আগাম সতর্কতার বিজ্ঞপ্তি প্রচার ও জনগণকে সচেতন করা, আগাম মানবিক কার্যক্রম নেওয়া, মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় ও বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর সভা, নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, শুকনা খাবার, শিশু খাদ্য এবং গো-খাদ্যের ব্যবস্থা করা, জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া। দুর্যোগ তথ্য পাওয়ার জন্য টোলফ্রি ১০৯০ ব্যবহারের কথা সভায় জানানো হয়।