ব্যতিক্রমী আয়োজন বটে। ফুলসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি। সড়কের দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে ফুল হাতে ছাত্রছাত্রীরা। গাড়িতে বসে আছেন বিদায়ী তিন শিক্ষক। সামনে-পেছনে শত শত মোটরসাইকেল শোভযাত্রায় শিক্ষার্থীরা।
এসব আয়োজন দেখে মনে হবে যেন কোনো বরযাত্রী বা রাজনৈতিক নেতা শোডাউনে বের হয়েছেন। আসলে তা নয়। ৪০ বছর শিক্ষকতা শেষে এমনই রাজকীয় বিদায় দেওয়া হলো তিন শিক্ষককে। অবসর বেলায় এমন আয়োজনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ওই শিক্ষকরা। বিদায়ী তিন শিক্ষককে ১ লাখ টাকা করে আর্থিক সম্মাননাও প্রদান করা হয়।
শনিবার বিকেলে চাকরি জীবনের শেষ দিনে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বখতিয়াপাড়া চারপীর আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এদিন বিদায় নিয়েছেন সহকারী শিক্ষক নাছির উদ্দিন, মধুসূদন নাথ ও স্বপন কুমার চক্রবর্তী। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অশ্রুসিক্ত চোখে তাদের প্রিয় শিক্ষকদের বিদায় জানালেন। তিনজনই ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক।
এদিন সকাল থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চলে বিদায় সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কবির আহমেদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক ইমন। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক ওসমান গণী। অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা।
বিদায় ভাষণে শিক্ষক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘বিদায় মুহূর্তে এমন আয়োজন দেখে সত্যি আমরা আবেগাপ্লুত। আমি বিদায় নিচ্ছি, কিন্তু আমার দোয়া রেখে গেলাম। তোমরা লেখাপড়া করে যখন অনেক বড় হবে, তখন আমাদের কথা মনে পড়বে। তোমরা নিজেদের মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। তোমরা সফল হও, সকলের সফলতাই আমার কাম্য।’
মাসুদ করিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আজ তিনজন জ্ঞানের আলো দানকারীকে বিদায় জানাতে হচ্ছে। তারা শুধু শিক্ষক ছিলেন না, পিতার মতো স্নেহ করতেন আমাদের। স্যারদের বিদায় আমাদের খুব মর্মাহত করছে।
ইউএনও ইশতিয়াক ইমন বলেন, একজন শিক্ষক যখন তাঁর চাকরিজীবন শেষ করে বিদায় নেন, এটা তাঁর জন্য কষ্টের। তখন বিদায় মুহূর্তে এমন রাজকীয় বিদায় তাঁকে সম্মানিত ও আনন্দিত করে। আজকের এমন আয়োজন সত্যি খুবই প্রশংসনীয়।