নাটোরের বড়াইগ্রামের বড়দেহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক সরকার। অবসর গ্রহণের দিন তাকে রাজসিক বিদায় জানিয়েছে সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ফুলের মালা দিয়ে সাজানো ঘোড়ার গাড়িতে প্রধান শিক্ষককে বিদায় জানান তারা।
বিদায়ী শিক্ষক আব্দুল খালেক সরকার নগর ইউনিয়নের বড়দেহা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে এ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। প্রথম থেকে দীর্ঘদিন বিনা বেতনে চাকরি করেন। পরবর্তীতে রেজিস্ট্রার্ড বিদ্যালয় হিসেবে নামমাত্র ভাতা পেতেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি ঘোষণা করলে তিনিও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান। ৩৮ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে যাওয়ার সময় তাকে এমন সম্মানজনক বিদায় দিতে পেরে শিক্ষার্থী, সহকর্মীসহ গ্রামবাসীরাও আনন্দিত।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান রুমেলের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সোনালী খাতুন ও রেহেনা খাতুন, উপজেলা শিক্ষক সমিতির সম্পাদক আজমা খাতুন, প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক সরকার বলেন, অবসরে যাবার আগে আমি মানসিকভাবে কিছুটা ভারাক্রান্ত ছিলাম। তবে সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা বিদায়ের দিন আমাকে যে সম্মান দিয়েছে তাতে আমি অভিভূত। চাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি সম্মান আমি পেয়েছি। বিদায়কালে আমি আমার সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাণভরে দোয়া করি।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হেনা খাতুন জানায়, প্রিয় স্যারের বিদায় আমাদের খুব মর্মাহত করেছে। তিনি না থাকলেও তার দেওয়া শিক্ষা আমাদের জীবন গড়তে সহায়ক হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সাইফুল বলেন, আমি স্যারের প্রথমে ছাত্র ও পরে সহকর্মী হয়েছি। বিদায় বড় কষ্টের, আমাকেও একদিন বিদায় নিতে হবে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষাগুরুর মর্যাদাকে তুলে ধরতে তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের রেখে বিদায় নেওয়াটা একজন শিক্ষকের জন্য কষ্টের। বিদায়ের কষ্ট লাঘবের পাশাপাশি শিক্ষক হিসেবে তার যোগ্য সম্মান দিতেই ব্যতিক্রমী এমন আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলায় এই প্রথম এমন রাজসিক বিদায়। শুধু তিনি নন, প্রতিটি শিক্ষকের বিদায়ই এমন হওয়া উচিত।