চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথমবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ইউনিট ও উপ-ইউনিটগুলোর মেধাতালিকার প্রথম দিকে থাকাদের শতকরা প্রায় ৬০ শতাংশই ভর্তি হননি। সে হিসাবে ভর্তির হার মাত্র ৪০ শতাংশ। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১ অক্টোবর। পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার। এ পর্যায়ে দেখা যায়, ৪ প্রধান ইউনিটের মেধাতালিকায় প্রথম ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ১৩৫ জন। একই অবস্থা উপ-ইউনিটগুলোতেও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের মেধাতালিকার প্রথম ১০০ জনের ৪৩ জনই ভর্তি হননি। এছাড়া কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের মেধাতালিকার প্রথম ১০০ জনের মধ্যে ভর্তি হননি ৮৫ জন। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের মেধাতালিকায় প্রথম ১০০ শিক্ষার্থীর ৮০ জন ভর্তি হননি। এই ইউনিটে মানবিক গ্রুপের শিক্ষার্থীদের জন্য সি-১ উপ-ইউনিটে আসন রয়েছে ২২টি। এই আসন পূরণ করতে মেধাতালিকার ৩৮তম শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য ডাকা হয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞান গ্রুপের শিক্ষার্থীদের সি-২ উপ-ইউনিটে প্রথম ১০০ জনের ৩৫ জন ভর্তি হননি। সমাজবিজ্ঞান ও আইন অনুষদের সব বিভাগ ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে গঠিত ‘ডি’ ইউনিটের মেধাতালিকার প্রথম ১০০ জনের মধ্যে ভর্তি হননি ৫৭ জন।
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগ এবং চারুকলা ইনস্টিটিউট নিয়ে গঠিত বি-১ উপ-ইউনিট ও ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ডি-১ উপ-ইউনিটেও শিক্ষার্থীদের ভর্তি না হওয়ার চিত্র দেখা গেছে। মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া বিশের অধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির সুযোগ পেলে শিক্ষার্থীরা আর চট্টগ্রামমুখী হন না।
এ ক্ষেত্রে চবির ভৌগোলিক অবস্থানও কিছুটা প্রভাব ফেলে। তবে শিক্ষার মান ও র্যাংকিংয়ে এগিয়ে আসতে পারলে শিক্ষার্থীরা চবিতে ভর্তির দিকে ঝুঁকবেন। চবির ‘সি’ ইউনিটের মেধাতালিকায় চতুর্থ হয়েছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী। ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘চবিতে মেধাতালিকায় যারা প্রথম দিকে আছেন, সাধারণত ঢাবিতেও তারা প্রথম দিকেই থাকেন। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে সবাই ঢাবিতে ভর্তি হতে চান।’
‘এ’ ইউনিটে নবম হয়ে চবিতে ভর্তি হন হুজাইফা তাহসিন। পরে ভর্তি বাতিল করে চলে যান চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট)। তার বাবা বলেন, ‘এখনকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে তো সমস্যার শেষ নেই। এগুলো দেখভালেরও কেউ নেই।’
চবির মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ মাহমুদ সোহেল বলেন, যারা অন্যত্র ভর্তি হয়েছেন তারা সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালো মনে করেই ভর্তি হয়েছেন। তবে আমরা যদি আরও বেটার কোয়ালিটি দিতে পারি, হয়তো তারা যাবে না। কিছু সংখ্যক চলে গেলেও ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রথম ১০ জনের ৯ জনকে চলে যেতে দেখিনি গত তিন বছরের অভিজ্ঞতায়। তবে বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করছেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, তুলনামূলক ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলে চলে যেতেই পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট বা মেডিকেলকেই সবাই প্রাধান্য দেয়। তবে আমাদের পড়াশোনার মান যদি আরও ভালো করা যেত, সংখ্যাটার হয়তো কিছুটা হেরফের হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, যারা গেছে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা বুয়েট খুলতে পারব না। তারা যেখানে পড়তে চায় পড়বে।