দৈনিকশিক্ষাডটকম, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভবন উদ্বোধনে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা খরচের ব্যাখ্যা চেয়ে আবার চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে দেয়া এক চিঠিতে এ তথ্য জানতে চায় ইউজিসি। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এ চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর উদ্বোধনের খরচের ব্যয়বিবরণী চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। পরে ২৪ ডিসেম্বর এ চিঠির জবাব দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দ্বিতীয়বার চিঠি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন কমিশনের অর্থ ও হিসাব বিভাগের দায়িত্বে থাকা সদস্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের। তিনি বলেন, আগের চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছিলো, একটি প্রকল্প থেকে এ খরচ করা হয়েছে। তবে ওই প্রকল্পের প্রামাণিক কাগজপত্র দেয়া হয়নি। তাই আবার চিঠি দিয়ে এসব চাওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া ইউজিসির এ চিঠিতে সই করেন কমিশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক মো. গোলাম দস্তগীর। চিঠিতে গত ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক সংবাদের সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ডিসেম্বর ইউজিসিকে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠির সূত্রও উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে গোলাম দস্তগীর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটির ‘মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ–এর গবেষণা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন ও প্রকল্প প্রস্তাবের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অর্থবরাদ্দের সত্যায়িত অনুলিপি কমিশনকে পাঠানোর অনুরোধ করেছেন। পাশাপাশি উদ্বোধনে ব্যয় করা সম্পূর্ণ অর্থের খাতভিত্তিক প্রমাণসহ বিস্তারিত তথ্য কমিশনকে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ জানান, চিঠি হাতে পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
গত ১৬ ডিসেম্বর ‘এক ভবন উদ্বোধনেই সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা খরচ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ খরচ দেখানো হয়। এমন বিপুল ব্যয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নানা সমালোচনা। শিক্ষক সমিতির একাধিক নেতাও এ নিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন।
ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের এই একাডেমিক ভবন গত ৪ জুন উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবন গত এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেন ঠিকাদার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি দপ্তরের নথিপত্রে দেখা যায়, ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে যে কমিটি করা হয়, সে কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার। দুই দফায় তিনি অনুষ্ঠানের জন্য টাকা নেন। প্রথমবার নেন ৩০ মে।
ওই দিন পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তরের এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষামন্ত্রীর সফর উপলক্ষে গঠিত কমিটির সদস্য সচিবকে (প্রক্টর) ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়ার জন্য উপাচার্য শিরীণ আখতার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন টাকা তোলেন প্রক্টর।
অনুষ্ঠানের পর ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ধাপে আবারো টাকা নেন প্রক্টর। ওই দিন হিসাব নিয়ামক দপ্তরকে দেয়া এক চিঠিতে প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার উল্লেখ করেন, ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য যে ৩৩ লাখ টাকা তিনি নিয়েছিলেন, তা দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়নি। জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক অতিরিক্ত খরচের কারণে আরো ১১ লাখ টাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ, ভবন উদ্বোধনে খরচ হয়েছে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।