দৈনিক শিক্ষাডটকম, চট্টগ্রাম : চরম শিক্ষক সংকটে ভুগছে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ। সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ চলছে মাত্র ২৩ জন শিক্ষক দিয়ে। এসবের মধ্যে ইতিহাস ও আইসিটি বিভাগ চলছে কোনো শিক্ষক ছাড়াই। শিক্ষক চেয়ে বারবার তাগাদা দিয়েও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ জেলার প্রাচীন ও প্রধান বিদ্যাপীঠ। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে । মাত্র ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চালু হওয়া এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজারের বেশি। কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সংকটও। এই নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে চরম অসন্তোষ।
জানা যায়, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক মিলিয়ে মোট সৃজিত শিক্ষক পদের সংখ্যা ৪৬টি। কিন্তু সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৩ জন শিক্ষক। ৬ জন গেস্ট টিচার দিয়েও শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। চারজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ইতিহাস বিভাগে পদায়নকৃত কোনো শিক্ষকই নেই। কোনো শিক্ষক ছাড়াই চলছে স্নাতক পর্যায়ের ইতিহাস বিভাগ। রসায়নে দুইজন আর তিনজন করে শিক্ষক রয়েছে অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। এ ছাড়া বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন বিষয়ের শিক্ষক আছেন মাত্র একজন করে। ৯ বছর আগে একটি পদ সৃষ্টি করা হলেও এখন অব্দি কোনো তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের শিক্ষককে পদায়ন করা হয়নি কলেজটিতে। গণিতের শিক্ষক দিয়েই পরিচালনা করা হয় তথ্যপ্রযুক্তির ক্লাস।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিছবাহুদ্দীন আহমদ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অথচ ঢাকা ও চট্টগ্রামের সরকারি কলেজগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক শিক্ষক রয়েছেন। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে অনেক শিক্ষক আসতে চান না। ফলে এখানে শিক্ষকের তীব্র সংকট রয়েছে।
এসব ছাড়াও কলেজে নানামুখী সংকট রয়েছে। কলেজ ল্যাবরেটরিতেও নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বই নেই লাইব্রেরিতেও। বইয়ের অভাবে বিভিন্ন রেফারেন্স কিনতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর এই কলেজে নেই কোনো ক্যান্টিন ও অডিটোরিয়াম। শ্রেণি কক্ষের সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। এর মধ্যে কলেজের কোনো অনুষ্ঠান হলে পাঠদান বন্ধ রেখে শ্রেণি কক্ষেই করতে হয় আয়োজন। এ ছাড়া অন্য কোনো শ্রেণির পরীক্ষা থাকলেও বন্ধ রাখতে হয় আরেক শ্রেণির পাঠদান। কলেজে কর্মচারীর সংকটও কম নয়। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীর দুটি পদের মধ্যে কর্মরত নেই একজনও, তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণির ষোলটি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ছাড়া আর কোনো বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়ারও সুযোগ নেই এই কলেজে। অনেক শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে পাশের জেলা রাঙামাটি ও চট্টগ্রামে যেতে হচ্ছে। আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে স্নাতক বিভাগের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শিক্ষক ও অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এসব সমস্যার আশু সমাধান না হলে জেলার শিক্ষার্থীরা সামনে ভয়াবহ সংকটে পড়বে। শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন, যেনো দ্রুত এই কলেজের সমস্যার সমাধান করা হয়।