রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) চলতি বছরে বন্ধ থাকবে ২০১ দিন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ক্যালেন্ডার থেকে জানা যায়, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার মিলে ১০৪ দিন। তা ছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের দোহাই দিয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, সশরীরে পাঠদান, পরিবহন সেবা, মেডিকেল সেবা, লাইব্রেরিসহ অন্য সবকিছু বন্ধ রাখা হয় । সে অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে আরও ৫২ দিন। সব মিলিয়ে বছরে সাপ্তাহিক ছুটিই ১৫৬ দিন, অর্থাৎ পাঁচ মাসেরও বেশি। অন্যদিকে রোজা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন অবকাশ, পূজাসহ অন্যান্য ছুটি মিলে কার্যক্রম বন্ধ থাকবে আরও ৭১ দিন। সে হিসাবে সমাবর্তনের ছুটিসহ মোট ছুটি ২২৮ দিন। তবে এই ৭১ দিন বন্ধের আবার ২৭ দিন পড়েছে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারের মধ্যে। সেই হিসাবে সমাবর্তনের দিনসহ মোট ছুটি দাঁড়ায় ২০১ দিন।
একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বছরে প্রায় ৭ মাস বন্ধ থাকার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অবশ্য বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ২০১ দিন ছুটি থাকলেও তা প্রকৃতপক্ষে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কারণ এসব ছুটির বেশিরভাগ দিনে সব প্রশাসনিক কাজ, মেডিকেল সেবা, লাইব্রেরি, সেমিনার কক্ষ, বিভাগের অফিস ও পরিবহন সেবা বন্ধ থাকলেও চলে ক্লাস-পরীক্ষা। বন্ধের দিনে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা চলার অনুমতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে প্রায় শতভাগ বিভাগের শিক্ষকরাই অনলাইনের বদলে অফলাইনে বা সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেন। ফলে ওপরে উল্লিখিত সেবাগুলো ছাড়াই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে বন্ধের দিনেও ক্লাস-পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিমাত্রায় শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা যেন কোনো ধরনের সেশনজটের মধ্যে না পড়ে, এজন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন বেশ কিছু বিভাগের শিক্ষক।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার নিয়ম রেখে ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ৪১তম জরুরি সভায় দিনটি সাপ্তাহিক ছুটি করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
তবে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে এভাবে সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বন্ধের মাঝেও কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার আন্দোলনও করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও ছাত্রসংগঠন। তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিভিন্ন ক্লোজ গ্রুপ, পেজ ও টাইমলাইনেও বন্ধ নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরছেন অনেক শিক্ষার্থী।
এর আগে বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করে বেরোবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। তখন ছাত্রফ্রন্টের বেরোবি শাখার সভাপতি রিনা মুরমু বলেন, ‘আমাদের সব দাবিই বেরোবি শিক্ষার্থীদের দাবি। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না রেখে দ্রুত অ্যাকাডেমিক ও সব ধরনের কার্যক্রম চালু করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন মোহন চাকী বলেন, ‘তীব্র শিক্ষক সংকটের পরও বৃহস্পতিবার আমরা ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছি, যেন কোনো জটের মধ্যে না পড়ি। বৃহস্পতিবার বন্ধের ফলে সাময়িক কিছু অসুবিধা হলেও বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা ছাড়া আমরা এর ফলে জট নিরসন এবং সরকারের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হতে পেরেছি। মূলত যেসব জায়গায় আর্থিক ব্যয় বেশি হয়, সেখানে আর্থিক কৃচ্ছ্রসাধনের জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মজিব উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বন্ধের ফলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অর্থ বাঁচছে। এটি সরকারের সিদ্ধান্ত, সরকার থেকেই নির্দেশ রয়েছে বাজেটের চেয়ে কম খরচ করতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারি সিদ্ধান্তকে মেনে এই দিন বন্ধ রেখেছে এবং খরচ কম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু যদি বলারই থাকে তবে সরকারের কাছে সেটা পৌঁছান, তাদের বলেন। তা ছাড়া বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বিভাগ বৃহস্পতিবার সশরীরে ক্লাস নিলে সেটা একান্তই তাদের সিদ্ধান্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বন্ধের বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বন্ধ বাতিল হবে নাকি এটি আরও কত দিন চলতে থাকবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কবে নাগাদ সিদ্ধান্ত হবে সেটিও আমার জানা নেই।’