খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. শহীদুর রহমান খানের ছেলে-মেয়ে সহ ৬ স্বজনের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়াও ২৪ জন শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত ও এক শিক্ষকের পদোন্নতি বাতিল এবং একজন শিক্ষকের পদাবনতি করা হয়েছে। তবে অন্য ৪৬ জন শিক্ষক ও ৩ কর্মচারীর নিয়োগের বিষয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গত সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়।
যাদের নিয়োগ বাতিল হয়েছে তারা হলেন- সাবেক উপাচার্য শহীদুর রহমান খানের মেয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ইশরাত খান, ছেলে সহকারী রেজিস্ট্রার শফিউর রহমান খান, শ্যালক শাখা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, তিন ভাতিজা কম্পিউটার অপারেটর মো. নিজাম উদ্দিন, মো. মিজানুর রহমান এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. ইমরান হোসেন।
এছাড়া যে ২৪ জন শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত রাখা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছেন ২০ জন প্রভাষক ও ৪ জন সহকারী অধ্যাপক। প্রয়োজনীয় সংখ্যক আর্টিকেলের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কমপক্ষে ১টি আর্টিকেল প্রথম লেখক হিসেবে ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালে প্রকাশ না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ওই ২০ জন প্রভাষক হলেন, হর্টিকালচার বিভাগের মো. মোর্শেদুল ইসলাম ও আফসানা ইয়াসমিন, সয়েল সায়েন্স বিভাগের নুসরাত জাহান মুমু ও নাহিদ হোসেন, এগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি বিভাগের রাকিবুল হাসান মো. রাব্বি ও তুষার কান্তি রায়, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের রোমানা জাহান মুন, লাইভস্টক প্রোডাকশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মুস্তাসিম ফেমাস, অ্যানিম্যাল নিউট্রিশন বিভাগের সাহাবুদ্দিন আহমেদ, সবুজকান্তি নাথ ও শাওলিন ফেরদৌস, একোয়াকালচার বিভাগের ফাতেমা জাহান, বাবলী আকতার ও মো. জাহিদ হোসেন, ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের রাবেয়া আক্তার, ফিশারিজ রিসোর্সেস কনজারভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মো. আসাদুর রহমান, ফার্মস্ট্রাকচার বিভাগের ফাহমিদা আক্তার, ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের তানজিনা আক্তার তামান্না, এগ্রিকালচারাল ফাইন্যান্স কো-অপারেটিভ অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মাহবুবা আখতার মিশু এবং এগ্রিকালচারাল ইকোনমিকস বিভাগের রোমানা বিশ্বাস।
বাকি চারজন সহকারী অধ্যাপক হলেন, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের নাহিদ রহমান, ফিজিওলজি বিভাগের ড. এম এ হান্নান, অ্যানিম্যাল নিউট্রিশন বিভাগের ড. মো. তসলিম হোসেন এবং ফার্ম স্ট্রাকচার বিভাগের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
এছাড়া প্রভাষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ফিশারিজ রিসোর্সেস কনজারভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ড. মো. মেহেদী আলমের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের মোহাম্মদ আশিকুল আলমকে সহকারী অধ্যাপকের পরিবর্তে নিয়োগকাল থেকে প্রভাষক হিসেবে পদাবনতি করা হয়েছে। তিনি কম যোগ্যতা নিয়ে ওই পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেন সহ গুরুতর বিভিন্ন অনিয়মের প্রেক্ষিতে তদন্ত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ওই তদন্তের পর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ আগস্ট ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষকরা আবেদন করায় মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ২৪ মার্চ পুনর্মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। গত ২৩ আগস্ট কমিটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বিষয়ে জানতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আশিকুল আলম বলেন, "শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা নিয়ে আমরা জরুরি সভা করেছি। সভার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপনাদেরকে পরে জানানো হবে।"