চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের আমরণ অনশনের দ্বিতীয় দিন চলছে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। তবে অনশনের ৩২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস মেলেনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছয়জন ও চতুর্থ শ্রেণির ১৪৯ জন কর্মচারী ‘দৈনিক মজুরি’ ভিত্তিতে কর্মরত আছেন। ইউজিসির অনুমোদন না থাকায় তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে অনশনকারীদের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল সভায় বসে। তবে এতে কোনো স্থায়ী সমাধান মেলেনি।
অনশনকারীরা জানান, উপাচার্য খালি পদগুলোতে নতুন করে আবেদনের মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগের মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে লিখিতভাবে স্থায়ী কোনো আশ্বাস দেননি। স্থায়ী আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব।
এদিকে তীব্র শীতে ও অনাহারে অনশনকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৫ জন অসুস্থ হয়ে জাবি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন এবং একজনকে গুরুতর অবস্থায় সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়।
অনশনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের অফিস সহকারী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি ২০১৭ সালে চাকরিতে জয়েন করি; কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাকরি স্থায়ীকরণের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আমরা আন্দোলনও করছি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের স্থায়ী কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি। এখন আমাদের পক্ষে আর ধৈর্য ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা অনশনে বসেছি।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের হল এটেনডেন্ট রাজিয়া আক্তার বলেন, চাকরির বয়স দীর্ঘ ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। দীর্ঘ একটা বছর প্রশাসনের কাছে বিভিন্নভাবে আমাদের দাবি জানিয়েও স্থায়ী কোনো আশ্বাস মেলেনি। তাই আমরা আমরণ অনশনে বসেছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব।
এর আগে গত ২ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ছয়টি হল পরিদর্শনে আসলে আন্দোলনকারীরা তার কাছে তাদের দাবি তুলে ধরেন। এ সময় তিনি তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এছাড়াও তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান নিয়োগগুলোতে অস্থায়ী কর্মচারীদের প্রাধান্য দিতে ইউজিসির নির্দেশনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা- এ ব্যাপারে জানতে উপাচার্যের সঙ্গে সাংবাদিকরা সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর উপাচার্যের ব্যক্তিগত সচিব এসে জানান- তিনি (উপাচার্য) ব্যস্ত থাকায় আজ সময় দিতে পারবেন না।