দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর আব্দুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী প্রধান শিক্ষক তানজিনা আক্তারের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের ৫ লাখ টাকা বিতরণে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসহায়তা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার টাকা, এমনকি স্কুলের টয়লেট সংস্কারের টাকা নিয়ে তিনি নয়ছয় করেছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনমাস পরে সেই টাকা ফেরত দেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ কয়েকজন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান শিক্ষক তানজিলা আক্তার বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
জানা যায়, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে বিভিন্নখাতে বিতরণের উদ্দেশে বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে সরকারি প্রণোদনার ৫ লাখ টাকা আসে।
এই টাকা শিক্ষক-কর্মচারী, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থী, টয়লেট, গ্রন্থাগারের জন্য বই, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা, কম্পিউটার ল্যাব সরঞ্জামাদি বাবদ বিতরণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। শুধু শিক্ষকদের প্রণোদনার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া অন্য সব খাতে টাকা বিতরণে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষণ কমিটি তদন্ত করে অনিয়ম পেয়েছে বলে জানা যায়। এ ছাড়াও রেজুলেশন ছাড়াই তিনি প্রণোদনার টাকা বিতরণ করেন।
সরকারি বরাদ্দের টাকা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বিতরণ না করে নিজের হাতে রেখে দেন বলে ঘোরতর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তবে একসময় এসব অনিয়ম কর্তৃপক্ষের কারো কারো নজরে এলে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়।
এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষক তানজিনা আক্তার ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অক্টোবর এতো অভিযোগ মাথায় নিয়ে গাজীপুর কাজিমউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।
এদিকে রতনপুর আব্দুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী মোশারফ উল্লাহ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকাররম হোসেনকে এসব অনিয়মের বিষয়ে জানান।
শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষক তানজিনা আক্তারকে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিদ্যালয়ে আসতে বলেন। এরপর চাপে পরে গত ১২ জানুয়ারি ওই প্রধান শিক্ষক তার স্বামীকে নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৪০ টাকা ফেরত দেন।
এদিকে প্রধান শিক্ষক তানজিনা আক্তার ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অক্টোবর বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নিয়ে অন্যত্র যোগদান করলেও ৮ অক্টোবর তিনি রতনপুর আব্দুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য কাজী মেহেদি হাসান জানান, সভাপতি বিদ্যালয়ে একক প্রাধান্য দেখিয়ে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি এ ব্যাপারে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান।
নবীনগর নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমি আগেও শুনেছি। তখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। অভিযুক্তদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বলেও জানান।
প্রণোদনার টাকা বিতরণ ও হাতে রাখার ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী মোশারফ উল্লাহ বলেন, আন্তনিরীক্ষণে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া সদ্য বিদায়ী প্রধান শিক্ষক অনিয়মের কথা স্বীকার করে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে ১২ জানুয়ারি টাকা ফেরত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তানজিনা আক্তার বলেন, আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ সব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মনগড়া। মূলত স্থানীয় শিক্ষকদের ইন্ধনে এসব করা হচ্ছে। স্থানীয় শিক্ষকদের প্রভাব খাটানোয় বাধা হয়েছিলাম আমি। তাই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ।
আমি শিক্ষার্থীদের কোনা তালিকা পাইনি বলে প্রণোদনার টাকা বণ্টন করে দিতে পারিনি। পরে কমিটির নির্দেশে টাকা ফেরত দিয়ে আসছি। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই, যোগ করেন তিনি।