মৌলভীবাজারের জুড়ীর শিলুয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ল্যাপটপ চুরির অভিযোগে এক শিক্ষার্থী ও তার বাবাকে দরজা বন্ধ করে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা গতকাল বৃহস্পতিবার ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেছে। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির অপসারণের দাবি জানায়।
জানা গেছে, জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের শিলুয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার দুর্গাপুর গ্রামের মব উল্লাহ (৫৩)। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের একটি কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং বিদ্যালয় দেখাশোনা করেন। তাঁর পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। একমাত্র ছেলে ইউসুফ আলী জিসান (১৭) একই প্রতিষ্ঠানের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালে সে এই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
দুর্গাপূজার সময় বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। বন্ধের সময় বিদ্যালয়ের ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব থেকে একটি ল্যাপটপ চুরি হয় বলে অভিযোগ কর্তৃপক্ষের। পরে ল্যাপটপটি নৈশপ্রহরী মব উল্লাহর ছেলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী জিসান চুরি করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ তুলে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিদ্যালয় বন্ধের পর ওই ল্যাপটপ পাওয়া যায় সহকারী প্রধান শিক্ষকের টেবিলের ড্রয়ারে।
জানা গেছে, চুরির অভিযোগ তুলে নৈশপ্রহরী মব উল্লাহকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, অধ্যক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কমিটির অন্যান্য লোকজন। গত বুধবার দুপুরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে বৈঠকে বসে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে শিক্ষার্থী জিসানকে ল্যাপটপ চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সে ল্যাপটপ চুরি করেনি বলে উপস্থিত সবাইকে জানায়। তখন তার বাবাকে বলা হয়, জিসান ল্যাপটপ চুরির কথা স্বীকার না করলে মব উল্লাহে চাকরিচ্যুত করা হবে। একপর্যায়ে শিক্ষক মিলনায়তনের দরজা বন্ধ করে প্রথমে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম শিক্ষার্থী জিসানকে মারধর করেন। এরপর জিসানকে মারধর করেন বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তাজুর রহমান, ইউপি সদস্য আব্দুল, সাবেক ইউপি সদস্য মছব্বির ও কাদির।
নৈশপ্রহরী মব উল্লাহ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষ আমাকে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। শেষমেশ ছেলের বিরুদ্ধে ল্যাপটপ চুরির অভিযোগ তুলে আমাকে মারধর করল।’
প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘শিক্ষার্থী জিসান ডিজিটাল ল্যাব থেকে ল্যাপটপ নিয়ে আমার টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেয়। স্কুল খোলার পর ড্রয়ার খুলতে দেখা যায় ল্যাপটপটি জিসান নামে পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা। এতেই প্রমাণ হয় সে ল্যাপটপ বিক্রির উদ্দেশ্যে চুরি করে। পরে বুধবার বৈঠকে শিক্ষার্থী জিসানকে চুরির বিষয়টি স্বীকার করাতে তাকে মারধর করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।’
কলেজ শাখার অধ্যক্ষ মো. তাজুর রহমান বলেন, ‘আমি জিসানকে কোনো মারধর করিনি।’