চলতি বছরের ১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের সাত সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে গণেশ চন্দ্র রায় সাহসকে সভাপতি ও নাহিদুজ্জামান শিপনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর চলে গেছে সাত মাসের বেশি সময়। এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। সকলে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করে আলোচনা চলছে হলগুলোতে কমিটি দেয়ার।
কমিটির বাকিরা হলেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন শাওন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আক্তার শুভ ও সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভূইয়া ইমন।
প্রতিবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি দেয়ার পর এটি আগে পূর্ণাঙ্গ করা হয়, এরপর হলগুলোতে কমিটি দেয়া হয়। কিন্তু এবার ঘটেছে ব্যতিক্রম ঘটনা। ঢাবির পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করেই হল কমিটি করার
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী অন্য গ্রুপের নেতাদের থেকে কম হওয়ায় তারা হলগুলোতে জুনিয়র নেতাকর্মী দিয়ে নিজেদের লোক বসাতে চাচ্ছেন। হল কমিটিগুলো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে হয়ে থাকে। এতে পদায়ন করার ক্ষেত্রে পুরো স্বাধীনতা থাকায় ইচ্ছেমতো লোক বসাতে পারে।
নেতাকর্মীরা বলছেন, আমরা দুঃসময়ে দলের পাশে ছিলাম। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজপথে থেকেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি চলতি বছরের মে মাসে হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ হয়নি। তাই দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি। তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন বিভিন্ন হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও হাতেগোনা কিছু নেতাকর্মী শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন (১৪-১৫ থেকে ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীরা)। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে নতুন করে যারা সংগঠনে এসেছেন বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আছেন কিন্তু অনেকেই এখন পর্যন্ত কোনো পদে নেই, অথবা পদে থাকলেও একটি হল শাখা চালানোর মতো পরিপক্ব না (১৯-২০ থেকে ২১-২২ সেশন)। তাদের দিয়েই কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে।
এসব বিষয়ে ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, আমি একটা মিটিংয়ে আছি। এসব বিষয়ে পরে কথা হবে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে নাগাদ হবে- এ প্রশ্নের জবাবে ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ১ মার্চ ঢাবি ছাত্রদলের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয়, যেখানে আমাদের নেতাকর্মীরা জীবনবাজি রেখে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বিজয় অর্জনের পর আমরা পুনরায় সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টনের কাজ শুরু করেছি। যেটা দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগে হলগুলোতে কমিটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে- এ বিষয়ে শিপন বলেন, এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হয়নি। ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের যেসকল নেতাকর্মী সংগঠনের প্রশ্নে আপসহীন থেকে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছে। আমরা আগে তাদের মূল্যায়ন নিশ্চিত করব। তবে ১৪-১৫ থেকে ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীরা হল কমিটিতে বাদ যাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি শিপন। তিনি রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের বিষয়ে বলেন, একটা সংগঠনের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক কখনও গ্রুপিং করতে পারে না। আমার কাছে সবাই সমান। এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয়।