দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করেছেন।
রোববার ২০তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় একজন ব্যতীত সব শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন। বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০তম ব্যাচের এক হাজার ২১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এক হাজার ২১৪ জনই আজকের পরীক্ষায় অংশ নেননি। এ থেকেই শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
গতকাল শনিবার ২২তম ব্যাচের প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাতেও কোনো শিক্ষার্থীই অংশগ্রহণ করেননি। অর্থাৎ, শতভাগ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাজনিত তীব্র শঙ্কায় রয়েছেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ কারণে গতকাল রোববার বুয়েটে কোনো শিক্ষার্থী জনসমাগম করেননি। ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় শনিবার রাত থেকে ক্রমাগত মাইকিং, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি-ধমকি প্রদান করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানারকম গুজব, বুয়েট শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয় এমন সকল অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
এমতাবস্থায় বুয়েট ক্যাম্পাস এবং আশপাশের এলাকা বুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এমনকি বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নিরাপত্তাজনিত এ সব কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের গতকাল রোববার ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেয়া মানে এই নয় যে, শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবি থেকে সরে এসেছে।
মিডিয়ায় বুয়েটের আন্দোলনরত বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ এনে বলা হয়, আমরা আবারো সাফ জানিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের অবস্থান কোনো একক ছাত্ররাজনীতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়। বরং, বুয়েট ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের সকল ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে, যেখানে ক্ষমতাচর্চার লোভ-লালসার শিকলে আবারো জিম্মি হয়ে যাবে না সকলের নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের ক্যাম্পাসের রাজনীতিমুক্ত থাকা, অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা শিক্ষার্থীরা পেলে, আমরা সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে আমাদের একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরত যাবো। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের পরীক্ষাগুলো রিসিডিউল করার আবেদন জানিয়েছি।
এদিকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ইস্যুতে আবারো উত্তাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। অপরদিকে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে ছাত্রলীগ।
গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রহিমের হলের সিট বাতিল করে প্রশাসন। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে আরো পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেছেন তারা।