ছাত্রলীগের পদে থেকে শিক্ষার্থী নির্যাতন, রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা - দৈনিকশিক্ষা

ছাত্রলীগের পদে থেকে শিক্ষার্থী নির্যাতন, রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাবি |

শিবির সন্দেহে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের পাঁচ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে হল ছাড়া করা হয়। এ ঘটনায় দুই ভুক্তভোগী বাদী হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের ১৩ নেতার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় পৃথক দুইটি মামলা করেন। মামলার আসামিদের একজন বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।   

এই শিক্ষকের নাম সৈয়দ আশিকুর রহমান। তৎকালীন সময়ে তিনি ঢাবির হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। মামলার বাদীরা হলেন ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাসরুর এবং একই শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বাপ্পী মিয়া।

 

উভয় মামলার আসামিরা হলেন- হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে সরকার রায়হান জহির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান (বর্তমান সেকশন অফিসার, রেজিস্ট্রার বিল্ডিং, যবিপ্রবি), মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান (সানী), হল ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক এসএম খালেদ চৌং ওরফে এসএম খালেদ চৌধুরী (৪১তম বিসিএস অডিট ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত), সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আশিকুর রহমান (বর্তমানে রাবির আইআর বিভাগের প্রভাষক)।

এছাড়া হল ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান মিজান, সাবেক সহসম্পাদক হাসিবুল আলম সৌরভ, সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ওরফে সোহেল, সাবেক পাঠাগার সম্পাদক শেখ আরিফুল ইসলাম, সাবেক সাংগঠনিক ইমতিয়াজ ওরফে ইমতিয়াজ আহমেদ শুভ্র (বর্তমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানার এসআই), সাবেক সহসম্পাদক নাঈম আহমেদ, সাবেক উপ-ছাত্র ও ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন (সম্প্রতি ধর্ষণের অভিযোগে আলোচিত) এবং সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক ইমরান হাসান।

আবদুল্লাহ আল মাসরুর তার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগস্ট দিবাগত রাত ১১টা থেকে ১৭ আগস্ট প্রথম প্রহর পর্যন্ত আসামিরা আমার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। রাতটির এ সময় ছিলো আমার ও আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীর জীবনের সবচেয়ে বর্ণনাতীত ভয়াবহ রাত। আমি সে রাতটিকে নিজের জীবনের শেষ রাত হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। আমাকে মারতে মারতে একজন ক্লান্ত হয়ে পড়লে আরেকজন আসে, সে জিরিয়ে নিলে আরেকজন আসে, এভাবে দীর্ঘসময় যাবৎ আমাকে মারতে থাকে। উপর্যুপরি রড ও অন্যান্য বস্তু দিয়ে মারার ফলে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফেটে গিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। আমার শরীরের রক্ত চুইয়ে টপ টপ করে পড়তে থাকে। আজরাইল আসন্ন মনে করে আমি কালেমা পড়তে থাকি।

এজাহারে আরও বলা হয়, তারা সবাই বলে এই শিবিরকে জানে মেরে ফেলতে হবে।’ পিটুনির মাথায় আল্লাহ গো, মা গো বলে চিৎকার দিতে থাকলে তারা বলে, 'তোর বাবা-মা আমরাই, এবার আরও ডাক' বলে আরও সজোরে মারতে থাকে। এরই মধ্যে শাহাদাত হোসেন সোহেল একটি ছুরি নিয়ে এসে আমার জিহ্বা টেনে বের করে কেটে ফেলতে চায় এবং ছুরি চালায়, এতে করে আমার জিহ্বার সামান্য অংশ কেটে রক্ত বের হয়। খালেদ, আরিফ, শাহাদাত হোসেন সোহেল, জহির, সানি ও সাইফুর আমাকে ও বাকি ভিকটিমদের টেনে এনে হল গেটে ফেলে রাখে। এ সময় বিভিন্ন পত্রিকা ও গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা এলে তারা যাতে আমাদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা না বলতে পারে এজন্য বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেয়। সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য নিতে বাধার সৃষ্টি করে। জহির ও সানি পুলিশকে কল দেয়। পুলিশ এসে আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নিয়ে যায়। ঢামেকে আমাদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়।

বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত ও ক্ষতের চিহ্ন এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। হাত-পায়ের অসহ্য যন্ত্রণা এখনো নিয়মিত হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছলতার কারণে উচ্চ চিকিৎসা নিতে পারছি না। এই মর্মান্তিক নির্যাতনের ঘটনা আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। তৎকালীন মুহসীন হল প্রভোস্ট নিজামুল হক ভূঁইয়া, ভিসি মো আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর এএম আমজাদ আমাদের নির্যাতনের বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমার মতো একই কায়দায়, একই ধরনে, একই মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বাপ্পী মিয়া ও মেহেদী হাসান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ইব্রাহিম হোসেন (ইরফান) এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আবদুল গাফফারকে উল্লেখিত একই পাতানো অপরাধে মেরে রক্তাক্ত করে। এতে তাদের কয়েকজনের হাত-পা ভেঙে যায়। তারাও আমার মতো মর্মান্তিক পরিণতি ভোগ করে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম সাহাবুদ্দিন শাহীন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে সংঘটিত নির্যাতনের ঘটনার দুইটি মামলা পেয়েছি। এগুলো নিয়ে কাজ চলমান। মামলার বিষয়ে জানতে রাবি শিক্ষক সৈয়দ আশিকুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে রাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলামের বক্তব্য জানতে মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনিও কল রিসিভ করেননি।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00341796875