ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক ছাত্রীকে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ পাঁচ ছাত্রীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের বিষয়টি হাইকোর্টকে অবগত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের দ্বৈত বেঞ্চে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ২৬ জুলাই দিন ধার্য করেন।
এদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বহিষ্কারাদেশে আইনগত ত্রুটি রয়েছে বলে আদালতকে জানান রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী বলেছেন, যথোপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন। আমি বলেছি যথাযথ হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা আছে, ভিসি প্রথম শাস্তি দেবেন, ৫০০ টাকা জরিমানা এবং ১২ মাসের জন্য বহিষ্কার। এরপর ভিসি যদি মনে করেন শাস্তি অপরাধের তুলনায় কম হয়েছে তাহলে তিনি এটা ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠাবেন। কিন্তু ভিসি নিজে শাস্তি না দিয়ে সরাসরি ডিসিপ্লানারি কমিটিতে পাঠিয়ে কমিটির মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার কারণে এটা ডিফেক্ট অব ল’ হয়েছে। এটা ভিসি ও কর্তৃপক্ষ দলীয় বিবেচনায় এবং ইচ্ছা করে করেছেন, যাতে ওই ছাত্রীরা বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিলে আদেশটা অকার্যকর হয়। আদালত বলেছেন- এগুলো লিখিত আকারে দিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীকে বলেছেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে। এরপর পরবর্তী শুনানির জন্য ২৬ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা তাকে নির্যাতন করেন। এ সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ফুলপরীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এ সময় বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এটা সর্বোচ্চ শাস্তি বলে জানিয়েছেন প্রক্টর শাহাদৎ হোসেন।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।