রংপুরের তারাগঞ্জে কলেজছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ এনে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কলেজছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ কলেজছাত্রীর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর পূর্বে উপজেলার সয়ার ইউপি চেয়ারম্যান ও পল্লিচিকিৎসক আল ইবাদত হোসেন পাইলটের সঙ্গে তার চৌপথীর ওষুধের ফার্মেসির দোকানে ওষুধ কিনতে এসে পরিচয় হয় ওই কলেজছাত্রীর। পরবর্তীতে উভয়ের মধ্যে মোবাইল ফোন নম্বর আদান-প্রদানের মাধ্যমে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এরই একপর্যায়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আল-ইবাদত হোসেন পাইলট ছাত্রীকে বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাবসহ শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য প্রস্তাব প্রদান করেন।
চেয়ারম্যানের দেওয়া প্রস্তাবে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী রাজি না হলে শেষে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে ওই কলেজছাত্রী অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে টালবাহানা করতে থাকেন। চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে করবে না বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই ছাত্রী নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলা বন্ধ রাখেন।
কিন্তু চেয়ারম্যান ওই ছাত্রীর সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করেন। এরপর তার সঙ্গে ওই ছাত্রী সম্পর্ক না রাখলে সমাজে তার নামে দুর্নাম ছড়িয়ে দেবেন বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
গত ২ অক্টোবর সকাল ৯টায় চেয়ারম্যান আল-ইবাদত হোসেন পাইলট তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ওই কলেজছাত্রীর মোবাইলে ফোন দিয়ে তার তারাগঞ্জ বাজারের চেম্বারে আসতে বলেন। ওই ছাত্রী চেয়ারম্যানের কথামতো তার চেম্বারে আসলে ওই ছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার কথা জানালে ছাত্রী অসম্মতি জানান। পরে ওই ছাত্রীকে বিয়ে করে রংপুর বিভাগীয় শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে তার সঙ্গে ঘরসংসার করার প্রলোভন দিয়ে ছাত্রীকে রাজি করেন। পরে ওই দিন ছাত্রীকে নিয়ে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নে অবস্থিত কুর্শা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান তার নিজের বাসায় নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।
এ সময় ওই কলেজছাত্রী তাকে বিয়ে করার কথা বললে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তার বাসা থেকে চলে যেতে বলেন। পরে ওই ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে বিষয়টি খুলে বলেন। তার পরিবারের লোকজন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আল-ইবাদত হোসেন পাইলটের বাড়িতে গেলে তাড়িয়ে দেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার থানায় হাজির হয়ে ওই কলেজছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেন পাইলটকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্ত সয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আল-ইবাদত হোসেন পাইলট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে হেয় করতে নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তিরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। যাতে আমার চেয়ারম্যান পদ চলে যায়। ওই ছাত্রীর সঙ্গে আমার কোনো দিনই আর্থিক ও শারীরিক সম্পর্ক ছিল না।
তারাগঞ্জ থানার ওসি জহুরুল হক সয়ার ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভিমটিমকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।