দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: রোজা ২৯ টি হলে এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে ১০ এপ্রিল বুধবার। আর যদি তাই হয়, ছুটির প্রথম দিন যারা বাড়ির পথে ছুটবেন তাদের ঈদের নামাজ পড়তে হতে পারে যাত্রাপথেই। কারণ সরকার যে ছুটি ঘোষণা করেছে সেই বর্ষপঞ্জি অনুসারে ঈদের ছুটি শুরু ১০ এপ্রিল থেকে। ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস করতে হবে। আর সরকারি ছুটি অনুসরণ করায় বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে। ছুটির বর্ষপঞ্জি বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই মিলছে। সরকার সাধারণত ২৯ রোজা ধরেই বর্ষপঞ্জি তৈরি করে। চাঁদের কারণে ২৯ রোজা শেষে ঈদ না হলে সরকার নির্বাহী আদেশে এক দিন ছুটি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এবার ৩০ রোজা ধরেই বর্ষপঞ্জি করা হয়েছে। এ কারণে বর্ষপঞ্জিতে ঈদের সম্ভাব্য তারিখ দেখানো হচ্ছে ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার।
২০২৪ সালের ছুটির যে তালিকা তাতে ঈদুল ফিতরের ছুটি ১০ থেকে ১২ এপ্রিল। ১০ এপ্রিল বুধবার, ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ও ১২ এপ্রিল শুক্রবার। ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন ১৪ এপ্রিল রোববার বাংলা নববর্ষের ছুটি। এসব মিলিয়ে টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাওয়া গেলেও ছুটি বিড়ম্বনার শেষ হচ্ছে না।
বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করতে গিয়ে জটিলতায় পড়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তারা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত অফিস ধরে ১০ এপ্রিলের টিকিট কাটতে চান। কিন্তু ২৯ রোজা হলে ১০ এপ্রিলেই ঈদ হবে। চাকরিজীবীদের রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়তে হবে। একই সংকট বেসরকারি চাকরিজীবীদেরও।
ছুটির বিষয়টি কেন তালগোল পাকালো জানতে চাইলে জনপ্রশাসনের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বিষয়টি চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল, তাই অনেক সময়ই পরিকল্পনামতো হয় না। কয়েক ঘণ্টা আগে চাঁদ দেখা গেলেই তারিখ বদলে যায়। এবারও অনেকটা ওরকমই হয়ে থাকতে পারে। যাই হোক, বিষয়টি নিয়ে ওপর মহলে আলোচনা আছে। সমাধান হতে পারে। কিন্তু সমাধান করতে গিয়ে দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে কীভাবে পড়তে পারে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘১০ এপ্রিল বুধবার ঈদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে দূরে থাকতে হলে ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার ছুটি দিতে হবে। ওই সপ্তাহে মাঝখানে কর্মদিবস থাকে শুধু ৮ এপ্রিল সোমবার। এ দিনটিকেও ছুটি দিলে ১০ দিনের লম্বা ছুটি হয়ে যায়। কারণ ৭ এপ্রিল পবিত্র শবেকদরের ছুটি। তার আগের দুদিন ৫ এপ্রিল শুক্র ও ৬ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এ ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১৪ এপ্রিল ১০ দিনের ছুটি পড়ে যাচ্ছে। তাই বাড়তি ছুটির বিষয়টি উপেক্ষা করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী নির্দেশনা আসে।’।
ঈদের ছুটিটা একটু প্রলম্বিত করে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নানা সময়ে নেওয়া হলেও তা আটকে দেওয়ার লোকের অভাব হয় না। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে একবার ঈদের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব উঠেছিল, তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছিল, শুধু ঈদের ছুটি বাড়ানো নয়, অন্যান্য প্রধান ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসবের ছুটিও বাড়ানো দরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই অভিমত পাওয়ার পর বিষয়টি ইতিবাচক ধরে নিয়েই সংশোধিত প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। প্রস্তাবটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি প্রস্তাবটি আর ফেরত আসেনি জনপ্রশাসনে। এমনটাই জানিয়েছেন একজন মধ্যসারির কর্মকর্তা।
এরপর একাধিকবার মন্ত্রিসভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কখনো কখনো ছুটি বাড়ানোও হয়েছে। কিন্তু ওইসব ছুটি বাড়ানো হয় শুধু ওই বছরের ঈদের জন্য।