গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল হওয়ায় মন খারাপ কোটি শিক্ষার্থীর। গতকাল রোববার থেকে এ ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু, ক্লাস চালু রাখার আকস্মিক ঘোষণায় ছুটি কাটানোর মানসিক প্রস্তুতি নেয়া শিক্ষার্থীরা নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছেন। সদ্য তেরোতে পা দেয়া অমিকে (ছদ্মনাম) গতকাল দেখা যায় মলিন মুখে স্কুলে যেতে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের বনশ্রী শাখায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তিনি। মলিন মুখের কারণ জানতে চাইলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে অমি বলেন, গত বুধবার ক্লাসে ঘোষণা করা হয়েছিলো ৩ আগস্ট ফের ক্লাস হবে। কিন্তু গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল হয়েছে। গত শনিবার এ বিষয়টি জানতে পেরেই মন খারাপ হয়েছিলো। ছুটিতে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু কিছুই হলো না। সকালে উঠে ক্লাসে যেতে হচ্ছে।
অমির মতোই মন খারাপ স্কুল ও ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া ছুটির তালিকা অনুসারে গত বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিলো মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে। ২ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি শেষে ৩ আগস্ট থেকে ফের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিলো। আর ভোকেশনালের ছুটি ছিলো ৩০ জুলাই পর্যন্ত।
কিন্তু গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল হওয়ায় স্কুলগুলোতে গতকাল রোববার ক্লাস শুরু হয়েছে। গত বুধবার থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রীষ্মের ছুটি ঘোষণা করা হলেও ওই দিন সন্ধ্যায় হঠাৎই এ ছুটি বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এরপর শ্রেণিশিক্ষকরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের স্কুলে আসতে বলেন। নোটিশ জারি করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাই গতকাল রোববার সকালে ক্লাসে যেতে হচ্ছে অমিসহ দেশের বিভিন্ন স্কুলের কোটি শিক্ষার্থীকে।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) গতবছরের হিসেব অনুযায়ী, দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে ৮৮ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেন। এর সঙ্গে স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলোতে আছেন ১৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক শাখার কয়েক লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন। ভোকেশনালের শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৮ লাখ। যাদের সবার ছুটি বাতিল হয়েছে। সে হিসেবে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থীর ছুটি বাতিল হয়েছে। তবে, দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীরা গ্রীষ্মের এই ছুটির আওতার বাইরে।
মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে গত বুধবার এক আলোচনা শেষে ছুটি বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই আগেভাগে শিক্ষাবর্ষের কাজ শেষ করতে হবে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠদান এবং মূল্যায়ন ও অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হবে। তাই গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শীতের ছুটির সঙ্গে তা সমন্বয় করা হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ছুটি বাতিল হওয়ার মন খারাপ অভিভাবকদেরও। সন্তানের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়াসহ নানা পরিকল্পনা ছিলো তাদের। কিন্তু কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। এর সঙ্গে আছে ডেঙ্গুর শঙ্কা। শিক্ষার্থী অমির মা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ছুটি বাতিলের ঘোষণায় সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। ওর দাদাবাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো, তাও হলো না। এদিকে আছে ডেঙ্গুর শঙ্কা। বনশ্রী, রামপুরা এলাকায় মশার প্রকোপ অনেক।
তিনি আরো বলেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দেও জাতীয় নির্বাচন হয়েছিলো জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দেও ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। কিন্তু তখন পূর্বনির্ধারিত ছুটি বাতিল বা গ্রীষ্মের ছুটি শীতকালেও নেয়া হয়নি। কিন্তু এবার হঠাৎ কেনো ছুটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো তা বোধগম্য নয়।