ছয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের করুন দশা - দৈনিকশিক্ষা

ছয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের করুন দশা

দৈনিকশিক্ষাডটকম, সাতক্ষীরা |

আশাশুনি উপজেলার ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এভাবে বছরের পর বছর পার হলেও নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছেন এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এসব বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ভবনেই ছাদ ধসে পড়া, পিলারে ফাটল, টিউবওয়েল ও শৌচাগারের সমস্যা এবং নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া যাতায়াতের রাস্তাও ভেঙে পড়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের প্রতি মনোনিবেশে ব্যঘাত এবং অনুপস্থিতির হার বেড়ে গেছে। এদিকে জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস হওয়ায় সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন অভিভাবকরা।

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৩৩ নম্বর হাঁসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২০০০খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয় বিদ্যালয় ভবন। কিন্তু ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ভবনের ছাদ ও দেয়ালে ফাটল ধরতে শুরু করে। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে একটি টিনশেড ঘরে ক্লাস নেয়া শুরু হয়, কিন্তু সেখানে সংকুলান হয়নি, ফলে পুরনো ভবনের কিছু ভালো কক্ষও ব্যবহৃত হতে থাকে। ১০-১২ বার ছাদ ধসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। ২০১৮ সালে এক শিক্ষক গুরুতর আহত হন এবং পরে মারা যান। প্রধান শিক্ষক নিত্যরঞ্জন মন্ডল জানান, এ পর্যন্ত ১০-১২ বার ছাদ ধসে পড়েছে; শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন কয়েকবার। দ্রুত নতুন ভবন এবং সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল ভবন নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ১৭ নম্বর গাইয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয় ভবন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ছাদ ধসে পড়ছে এবং ভেতরে পানি পড়ছে। স্কুলের টিনশেড ঘর ব্যবহার করা হলেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকে।

প্রধান শিক্ষক উষা মন্ডল জানান, ৪ গ্রামের শিক্ষার্থীরা স্কুলে পড়ালেখা করে। বর্ষার সময় স্কুলের মেঝে পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া দুটি শৌচাগারের একটি নষ্ট, টিউবওয়েল নষ্ট, খাবার পানির সংকট, জানালা নষ্ট, বেঞ্চ ও চেয়ার সংকট এবং আসবাবের অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। ’৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত ১০৫ নম্বর নাটানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের কিছু অংশ ধসে পড়েছে এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের পথও বিপজ্জনক। প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর মল্লিক জানান, নতুন ভবনের জন্য বারবার শিক্ষা অফিসে জানানো হয়েছে। স্কুলে যাতয়াতের পথটিও খুবই বেহাল দশা। অবিলম্বে নতুন ভবন, প্রাচীর নির্মাণ ও রাস্তা সংস্কার প্রয়োজন।

কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। এই বিদ্যালয় ভবনের ছাদ, পিলার এবং কার্ণিশে ফাটল ধরে ভেঙে পড়ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আফরোজা হোসেন জানান, ভবনের ভঙ্গুর দশার পাশাপাশি টিউবওয়েল নষ্ট, টয়লেট সমস্যা, যাতয়াতের পথের দুরাবস্থা, প্রাচীরে ভাঙন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার পরিবেশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত নতুন ভবন, প্রাচীর, টয়লেট নির্মাণ করা জরুরি।  

পুইজালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে ভবনটি নির্মিত হয়। তবে বর্তমানে ভবনটি ভেঙে পড়ছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রাবতী সরকার জানান, প্রত্যন্ত বিল, খালের মধ্যে অবস্থিত এসব এলাকার মানুষকে দুর্যোগের সময় আশ্রয় নেয়ার কোন উঁচু জায়গা নেই। যাতয়াত ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। রাস্তা পানিতে তলিয়ে থাকে। এখানে একটি সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল ভবন নির্মাণ সময়ের দাবি। তাছাড়া টিউবওয়েল, টয়লেট, রাস্তা নির্মাণ খুবই প্রয়োজন। ১৪৭ নম্বর ল²ীখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত। বর্তমানে স্কুলের ভবন খুবই জরাজীর্ণ। ছাদ ও দেয়াল ভেঙে পড়ছে।

এছাড়া ৩ বার ছাউনি ঝড়ে উড়ে গেলে আবার কোনো রকমে ছেয়ে দিয়ে ক্লাস করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের চত্বর পানিতে তলিয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীরা হাঁটুপানিতে স্কুলে যাতায়াত করে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, দ্রুত একটি সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল ভবন নির্মাণ করা হোক।

অভিভাবকরা জানান, স্কুলের ভবনের এমন বেহাল দশা, যেন যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেজন্য সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে সব সময় চিন্তায় থাকতে হয়। তারা আরো বলেন, স্কুলগুলোর বর্তমান অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে এবং শিক্ষার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ক্লাস্টার অফিসার শাহজাহান আলী জানান, এসব বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা বেশ আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমাদের পরামর্শে পাশে অস্থায়ী টিনশেড ঘর নির্মাণ করে ক্লাস চালানো হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে না। কোনো কোনো স্কুল ভবনের ছাদ ভেঙে পড়েছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চায় না। আমরা ভবন চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর ছবিসহ তালিকা পাঠিয়েছি। এখনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030970573425293