জন্মের চার বছর আগের জাল একটি এসএসসি পাসের সনদ দেখিয়ে একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর এমপিও বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমপিও বাতিল হওয়া ওই কর্মচারী গতকাল সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। ঘটনাটি নীলফামারীর জলঢাকার গাবরোল তহশিলদার পাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই কর্মচারী নাম মনছুর আলী।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মনছুর আলী নামে এক ব্যক্তিকে গাবরোল তহশিলদার পাড়া দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (এমএলএসএস) পদে নিয়োগ দেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি ফয়জুল হকসহ নিয়োগ কমিটি। পরবর্তীতে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে তিনিসহ ৩ জন এমপিওভুক্ত হন এবং ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত এমপিও সিটে নাম ছিল চতুর্থ শ্রেণির ওই কর্মচারী মনছুর আলী। তবে, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস থেকে মনছুর আলীর নামে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে বিল দাখিল করেননি তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বিমল চন্দ্র রায়।
অভিযোগে মনছুর আলী দাবি করেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বেতন ভাতা চাইতে গেলে মনছুর আলীকে বিভিন্ন আশ্বাসে রাখেন বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে তাকে তার পদ থেকে বাদ দিয়ে সভাপতির আপন ভাগিনাকে একইপদে নিয়োগ দেয়ার পায়তারা করছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফয়জুল হক। বিল বন্ধ করে ওই পদে নতুন নিয়োগ দেয়ায় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মনছুর আলী। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ আগস্ট প্রধান শিক্ষক বিমল চন্দ্র রায় মৃত্যবরণ করেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত গাবরোল তহশিলদার পাড়া দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়টিতে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ফয়জুল হক। দীর্ঘ ৩০ বছর সভাপতি থাকায় নিজের আত্মীয় স্বজনদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন তিনি। অপর দিকে নিজে রাজনৈতিক নেতা এবং এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো তদন্ত ছাড়াই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দাখিল করা মনছুর আলীর অভিযোগটি অজ্ঞাত কারণে স্থাগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে করোনা ভাইরাসে সকল অফিস আদালত বন্ধ থাকায় কোথাও লিখিত অভিযোগ দিতে পারেনি ভুক্তভোগী মনছুর আলী।
মনছুর জানান, কি কারণের এমপিও বাতিল করা হয়েছে তা জানতে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার চঞ্চল কুমার ভৌমিকের কাছে আবেদন করেছিলেন তিনি। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে কি কারণে তাকে বাতিল করা হয়েছে তার প্রমাণ পত্র হাতে পান ওই ভুক্তভোগী।
চাকরি বাতিলের কাগজপত্রে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে একটি এসএসসি পাসের ভুয়া সনদ, স্বাক্ষর জাল করে দেয়া চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের আবেদন ও ভুয়া রেজুলেশন দাখিল করে মনছুর আলীর চাকরি বাতিল করে নিজের আপন ভাগিনাকে একই পদে নিয়োগ দেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী মনছুর আলীর জন্ম ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর অষ্টম শ্রেণি পাসের একটি সনদ দিয়ে গাবরোল তহশিলদার পাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এমএলএসএস পদে যোগদান করেছিলেন। চাকরি বিধি অনযায়ী ২০৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তার অবসর গ্রহণের কথা। কিন্তু বিদ্যালয়ের সভাপতি জন্মের ৪ বছর আগে তার নামে একটি জাল এসএসসি পাসের সনদ দেখিয়ে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে তাকে অবসর দেখিয়ে এমপিও বাতিল করেন। এ ঘটনায় রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন মনছুর আলী।জানতে চাইলে গাবরোল তহশিলদার পাড়া দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।
জানতে চাইলে স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ময়নুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।