দৈনিক শিক্ষাডটকম, জবি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) আইন অমান্য করে লিয়েন ভোগের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোচনা শোভার বিরুদ্ধে। অনুমোদনহীনভাবে এক বছর ১০ মাস দুই দিন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।
বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টিতে আসলে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুনে রেজিস্ট্রার অফিস থেকে অভিযোগ আকারে একটি নোটিশও দেয়া হয় তাকে।
জানা যায়, দর্শন বিভাগের শিক্ষক সোচনা শোভা ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ আগস্ট শিক্ষাছুটিতে যান। মোট ৬ বছর ৭ মাস ১০ দিন শিক্ষাছুটি ভোগ করে ০৭ এপ্রিল ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের কর্মস্থলে যোগদান করেন তিনি।
পরবর্তীতে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ফেব্রুয়ারি লিয়েনে আবেদন করেন। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম যোগদানের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১১ হতে লিয়েনে ছুটিতে যাওয়ার তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সর্বমোট চাকরিকাল হতে ভোগকৃত মোট ৬ বছর ৭ মাস ১০ দিন শিক্ষাছুটি বাদ দিলে সোচনার চাকরিকাল হয় ১ বছর ৬ মাস ১৪ দিন যা লিয়েন ছুটিতে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জেষ্ঠ্য শিক্ষক।
এক্ষেত্রে লিয়েন ছুটির নীতিমালা অনুযায়ী তার ন্যূনতম চাকরিকাল ৩ বছর পূর্ণ করে না। কিন্ত লিয়েন ছুটি অনুমোদনের পূর্বেই মোনাস ইউনিভার্সিটির মোনাস বায়োএথিক্স সেন্টার, স্কুল অন ফিলোসোফিক্যাল হিস্টোরিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসওপিএইচআইএ), ফ্যাকাল্টি অব আর্টস বিভাগে টিচিং অ্যাসোসিয়েট হিসেবে যোগদান করেন বলে জানা যায় রেজিস্ট্রার দপ্তরের চিঠিতে।
প্রসঙ্গত, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত ১ বছর ১০ মাস ২ দিন তিনি অননুমোদিতভাবে অস্ট্রেলিয়া অবস্থান করেন। এ সময় তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকাসহ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অস্ট্রেলিয়াতে গমন ও অবস্থান করেন। যা সরকারি নির্দেশাবলী অমান্য করেছে। তার ভোগকৃত শিক্ষা ছুটির সমপরিমাণ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেননি। এ ছাড়া শিক্ষক সোচনা শোভার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিকে কোনোরূপ সহযোগিতা না করা এবং বিভাগের ৪টি একাডেমিক কমিটি ও একটি ‘কমিটি অব কোর্সেস’ এর মিটিং-এ অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে অভিযোগ আকারে পাঠানো নোটিশে জানা যায়, তার এ ধরনের কার্যকলাপ ও আচরণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫ এবং সরকারি কর্মচারী বিধিমালায় বর্ণিত কার্যসমূহের আওতায় পড়ে। ফলে সোচনা শোভাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে অভিযুক্ত করেছে প্রশাসন।
অভিযুক্ত শিক্ষক সোচনা শোভার বিরুদ্ধে এসকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.মাসুম বিল্লাহ বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। কেসটি নানা মাত্রিকতায় ভরপুর। সর্বোচ্চ অনুধাবন ও মনোনিবেশ দিয়ে ড. সোচনা শোভার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট উপস্থাপন করা হবে।
এই তদন্ত কমিটি গঠনের আগেও ঘটনার অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিও গঠন হয়। তবে সেই কমিটির তদন্তে কোনোরূপ সহযোগিতা না করার অভিযোগও উঠেছে এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে আমাদের তদন্তের রিপোর্ট প্রশাসনকে জমা দিয়েছি। তদন্ত কার্যক্রমে অভিযুক্তের সহযোগিতা পাইনি। রিপোর্টে সকল বিষয়েই বিস্তারিত বলা আছে। সিন্ডিকেট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে, গত জানুয়ারি মাস থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত বিভাগে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক চারটি একাডেমিক মিটিংয়ে অনুপস্থিত ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অর্থ্যাৎ প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের ক্লাস থাকলেও ক্লাস নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, প্রায় দেড় মাস যাবৎ আমাদের ক্লাস চলছে কিন্তু ম্যাডাম কোনো ক্লাস নেননি। তবে ঈদের পরে তিনি ক্লাস নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড হাফিজুর রহমান বলেন, এই ঘটনা ও অভিযোগগুলো আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বায়িত্ব নেয়ার আগের। বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত করছে। তদন্ত অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, বিষয়ে তদন্ত কমিটি রয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। তারাই আইন বিশ্লেষণ করবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সোচনা শোভার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নিম একাধিকবার মুঠোফোনে কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।