দৈনিক শিক্ষাডটকম, জবি: শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক নিয়ে হতাশা, অবসাদগ্রস্ততা, পরীক্ষা-ভীতি দূর করতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে মানসিক সেবা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ না থাকায় মনোবিজ্ঞান বিভাগের ইন্টার্ন শিক্ষার্থীদের দিয়ে কেবল প্রাথমিক সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেন্টারটিতে কোনো বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বন্ধ আছে সেন্টারটির বাজেটও। ফলে কোনো রকমে চলছে সেন্টারের কার্যক্রম।
২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জানুয়ারি রফিক ভবনের নিচতলায় কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল সেন্টারের পাশে তিনটি কক্ষে চালু করা হয়েছিল কাউন্সেলিং সেন্টার।
কাউন্সেলিং সেন্টারের তথ্যমতে, গত দুই বছরে যেসব শিক্ষার্থী সেবা নিতে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশ হতাশায়, ২৩ শতাংশ মানসিক অবসাদে, ১৮ শতাংশ প্রেমঘটিত সমস্যায় ভুগছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাউন্সেলিং সেন্টারে দুজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব সিন্ডিকেটে পাস হয়েছে। এরপর ইউজিসির অনুমোদনের জন্য নথি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে জমা দেন সেন্টারের আহ্বায়ক। কিন্তু সেই নথি রেজিস্ট্রারের দপ্তরে চাপা পড়ে আছে।
সূত্রমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধীনে কাউন্সেলিং সেন্টারটি চালু হওয়ার পর থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় খরচের খাত থেকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ পেত। কিন্তু গত বছরের নভেম্বর থেকে এ বরাদ্দও বন্ধ আছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘কাউন্সেলিং সেন্টারটির যা যা সমস্যা আছে সব শুনেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করব।’
সম্প্রতি সেন্টারে গিয়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টায় পর্যন্ত কোনো কাউন্সেলিং সেবাদাতার দেখা মেলেনি। শুধু একজন অফিস কর্মচারী বসে ছিলেন।
সেন্টারের আহ্বায়ক অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ বলেন, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে হতাশা, পরীক্ষা-ভীতি, বন্ধুদের দ্বারা বুলিংয়ের শিকার হয়ে সেবা নিতে আসে বেশি। অনেক দিন এসব কষ্ট জমে জমে কিছু শিক্ষার্থী আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের দিকে ঝুঁকে যায়।
ইন্টার্ন কাউন্সিলর মাহাফুজ বলেন, ‘সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে নানা ধরনের মানসিক সমস্যার লক্ষণ পেয়েছি। সমস্যার ধরন চিহ্নিত করে একাধিক সেশনে কাউন্সেলিং দেওয়া হয়। আবার কাউকে আমরা উন্নত কাউন্সেলিংয়ের জন্যও রেফার করে থাকি।’
সেবাগ্রহীতা ফারিয়া আফরিন বলেন, ‘আমি সেবা নিতে গিয়েছিলাম। একজন নারী ইন্টার্ন আমাকে সেবা দিয়েছিলেন। দুটি সেশন দেওয়ার কথা ছিল। প্রথম সেশন ভালো গিয়েছিল; কিন্তু পরের সেশনের জন্য আর কল করেনি।’
বিশেষজ্ঞ নিয়োগের বিষয়ে অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ বলেন, দুজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগের প্রস্তাব সিন্ডিকেটে পাস হয়েছে। কিন্তু ফাইলটা রেজিস্ট্রার দপ্তরেই আটকা। উপাচার্যের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্য মহোদয় আমাদের সময় দিয়েছেন। তিনি বাজেট পুনরায় চালু করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’
রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। ফাইলটির খোঁজ নিচ্ছি।’