জমিদাতা হয়েও উপেক্ষিত ভাষাসৈনিক, এমপির মায়ের নামে স্কুল - দৈনিকশিক্ষা

জমিদাতা হয়েও উপেক্ষিত ভাষাসৈনিক, এমপির মায়ের নামে স্কুল

যশোর প্রতিনিধি |

যশোরের ‘খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়’র নাম পরিবর্তন করে ‘খাজুরা মাখনবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির জমিদাতা ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলতাফ হোসেনের পরিবার।

তাদের দাবি, স্থানীয় সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় প্রভাব বিস্তার করে স্কুলটি তার মায়ের নামে করে নিয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন ওই স্কুলের জমি দান করায় তার নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করার দাবি জানিয়েছে পরিবার।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলতাফ হোসেনের ছোট ছেলে মাসুম রেজা।

তিনি জানান, তার বাবা ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ডা. আলতাফ হোসেন। তিনি ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮৫ সালের ১১ অক্টোবর বৃহত্তর খাজুরা বাজারের শিক্ষিত ও সচেতন মানুষদের সঙ্গে নিয়ে তিনি খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটির জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন ৩৪ নম্বর মথুরাপুর মৌজার ২৬ শতাংশ জমি দান করেন। কিন্তু তিনি তার নিজের নামে নামকরণ না করে বৃহত্তর খাজুরার নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করেন। 

মাসুম রেজা দাবি করেন, যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় প্রভাব বিস্তার করে ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে স্কুলটি তার মায়ের নামে ‘খাজুরা মাখনবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ করে নিয়েছেন। স্বয়ং সংসদ সদস্য এ ঘটনায় সম্পৃক্ত হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে এলাকায় প্রতিবাদ জানানোরও সুযোগ পাননি তারা।

মাসুম রেজা জানান, খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে টিপিএম অর্থাৎ তেলিধান্যপুড়া, পান্তাপাড়া, মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৪ শতাংশ জমি তার বাবা দান করেছেন। এই স্কুলের দক্ষিণ পাশে খাজুরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহে তিনি ৭ শতাংশ জমি দান করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন ছেলে জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার পাশাপাশি তার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করায় তার বাবা আলতাফ হোসেন ছাড়াও মাস্টার আব্দুল হামিদ লস্করসহ মোট ছয়জন গ্রেফতার হন এবং পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত অ্যাডভোকেট রওশন আলী পুলিশ হেফাজত থেকে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রচারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যশোরে যান। অ্যাডভোকেট রওশন আলীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ওই বিষয়টি জানতে পারেন। ভাষা আন্দোলনে সাহসিকতার পরিচয় পেয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাইসাইকেলযোগে খাজুরায় যান বলেও মাসুম রেজা দাবি করেন।

এরপর থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালবেসে প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন ডা. আলতাফ হোসেন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ছয় দফা আন্দোলনে বাঘারপাড়া থানার অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভারতে চাঁপাবাড়ীয় ক্যাম্পে মেডিকেল অফিসার হিসেবে দীর্ঘ ৯ মাস নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সর্বশেষ বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং বন্দবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মাসুম রেজা একজন ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ওই প্রতিষ্ঠানটির নাম যেন ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলতাফ হোসেনের নামে করা হয়। এসময় ডা. আলতাফ হোসেনের বড় ছেলে কামাল হোসেন, মেয়ে রওশন আরা, মঞ্জুয়ারা বেগম, ছালমা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় বলেন, স্কুলের নামকরণের ক্ষেত্রে নিয়ম নীতিমালা মেনেই করতে হয়। নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে নিয়ম মাফিক আবেদনের পর মন্ত্রণালয় নামকরণ করেছে। সেটিও ১০ বছর আগের ঘটনা।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003180980682373