চৈত্র শেষ হতে না হতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। তবে এখনও ‘তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা’ জারি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দীন।
রোববার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, এ রকম কিছু বলিনি। তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা জারি করার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।
কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মসূচি বা পরিকল্পনা রয়েছে কিনা; জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তবে তা জরুরি অবস্থা জারি করার মতো অবস্থায় পৌঁছায়নি।তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে বলে বিভিন্ন অনলাইনে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সত্য না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গরম দিন কাটাচ্ছেন ঢাকার মানুষ। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠে গেছে। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরমের আঁচ আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। ঢাকায় দুপুর ১২টায় আর্দ্রতা ছিল মাত্র ২৩ শতাংশ। ১৯৬৫ সালে ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশব্যাপী চলা মৃদু ও তীব্র তাপপ্রবাহ আরও তিন দিন অব্যাহত থাকবে।আগামী বৃহস্পতিবারের (২০ এপ্রিল) আগে নেই বৃষ্টির পূর্বাভাস। এ ছাড়া ঢাকায়ও আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি আরও তিন দিন বিরাজ করবে। তারপর তাপমাত্রা কিছুটা কমতির দিকে যাবে বলে আশা করছি। তবে ঢাকায় আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, ফেনী, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী জেলায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠতে পারে; ঢাকা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাগুরা, নড়াইলে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠতে পারে; বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, চাপাই নবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে; খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলাগুলোর তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পারবত্য চট্রগ্রামের সব জেলায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাইরে বের হলেই গরমে অস্থির লাগছে। ঘরের বাইরে বের হতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু প্রয়োজনে তো বের হতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতির এ বিরূপ আচরণ কঠিন করে তুলেছে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনকে। যেকোনো বয়সের মানুষের জন্যই বাইরে বের হওয়া যেন চ্যালেঞ্জের।
টানা তাপপ্রবাহে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা।
তারা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা শুরু হয়েছে। পেট ব্যথা, বমিসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোগী আসতে থাকে। গরমের কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাটাই বেশি। তাই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ তাদের।