প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান ০.৪৮ শতাংশের কম হলেও; এর নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের মধ্যে আমরা অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিরূপ প্রভাব আমাদের সম্ভাব্য উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফোরাম 'ন্যাপ এক্সপো-২০২৪' এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক পয়েন্ট ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমিত রাখতে উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে বাংলাদেশ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ইনটেন্ড ন্যাশনালি ডিটারমাইনড কনট্রিবিউশন (আইএনডিসি) প্রণয়ন করে। আর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তা হালনাগাদ করা হয় এবং ইউএনএফসিসিসিতে জমা দেয়া হয়। এতে আমরা শর্তহীন ৬ পয়েন্ট ৭ ৩ পারসেন্ট এবং শর্তযুক্ত পণ্য পয়েন্ট ১ ২ পারসেন্ট গ্রিস হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস করে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস পায়। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশ সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়ায়; বাংলাদেশের প্রায় ১২ থেকে ১৭ শতাংশ অঞ্চল এ শতাব্দীর শেষ দিকে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েুছে।
আগামী ২৭ বছরে ন্যাপে এ গৃহীত কর্মপরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এজন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণে ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলো ব্যাপক কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অধিক ভূমিকা রেখে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে রক্ষা করা, তাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা প্রত্যাশা করি, উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান ০.৪৮ শতাংশের কম হলেও; এর নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের মধ্যে আমরা অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিরূপ প্রভাব আমাদের সম্ভাব্য উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে আরও বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরেও বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের হুমকিতে থাকা দেশগুলো যাতে অব্যাহতভাবে আর্থিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়, সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ধনী দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যে সকল দেশ এরইমধ্যে ন্যাপ প্রণয়ন করেছে, তারা যেন ন্যাপ বাস্তবায়নে সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে আর্থিক সহযোগিতা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
জলবায়ু অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ঝুঁকি হ্রাসে আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে ৬ দফা প্রস্তাবনার দেন প্রধানমন্ত্রী।
৬ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে উন্নত দেশগুলোর দ্বারা জলবায়ু তহবিলে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে- এ কথা জানিয়ে আবারও তিনি বলেন, যুদ্ধ ও অস্ত্র কেনায় ব্যয় না করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ ব্যয় করলে বিশ্ব রক্ষা পেত।