দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ভোট হচ্ছে। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ভোটাভুটি হওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশের সময় গতকাল রাত ১টা পর্যন্ত এ ভোট শুরু হয়নি। এই প্রস্তাব পাস হলে কার্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি পাবে। তবে ইসরায়েলের কট্টর মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা থাকায় উদ্যোগটি ব্যর্থ হবে বলে মনে হচ্ছে। এর আগেই ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে এ ভোটাভুটি এগিয়ে না নিতে অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে তিনি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৩ বছর পর এ ধরনের প্রস্তাব ফের উঠছে নিরাপত্তা পরিষদে।
ভোটের আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের বিশেষ প্রতিনিধি জিয়াদ আবু আমর নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, বর্তমানের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে আন্তর্জাতিক সংস্থায় পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব পাস এ অঞ্চলে শান্তি অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হবে।
বৃহস্পতিবার আবু আমর বলেন, আমরা এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং শান্তিতে বসবাস করার আকাঙ্ক্ষা করছি।
প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, এটি রাজনৈতিক আলোচনা এবং শান্তির সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করবে। তবে এ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে আবু আমর বলেন, বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে আলোচনার মাধ্যমে, জাতিসংঘের প্রস্তাবের মাধ্যমে নয়। তাহলে ইসরায়েল রাষ্ট্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? এটি কি জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে হয়নি, যা ছিল রেজুলেশন ১৮১?
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেন, গাজা যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের ওপর ইরানের আক্রমণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ‘পূর্ণ মাত্রার আঞ্চলিক সংঘাতে’ পরিণত হতে পারে। গুতেরেস ইরানের কনস্যুলেটে হামলা এবং ইসরায়েলে ড্রোন হামলা উভয়ের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিশোধের রক্তাক্ত চক্র শেষ করার এখনই সময়। এখন থামার সময় এসেছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের কথা মুখে বলে এলেও দেশটি এর বিপক্ষে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জাতিসংঘে ভোটাভুটির আগে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে প্রেসিডেন্ট পদে থাকা মালটাসহ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এ সম্পর্কিত একটি গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। ইন্টারসেপ্টে প্রকাশিত নথি অনুসারে, জাতিসংঘের স্বীকৃতির বিরোধিতা করতে মালটা, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশকে লবিং করতে বলা হচ্ছে।
নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাব পাস হতে এর পক্ষে অন্তত ৯টি ভোট প্রয়োজন। তবে স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া কিংবা চীনের মধ্যে একটি দেশও ভেটো দিলে প্রস্তাবটি পাস হবে না। কূটনীতিকরা বলছেন, ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার পক্ষে সমর্থন করতে পারে নিরাপত্তা পরিষদের ১৩ সদস্য। ফলে প্রস্তাবটি আটকানোর জন্য শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিতে পারে।
ফিলিস্তিন ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পায়। জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য দেশটি বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে আসছে। দুই সপ্তাহ আগে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার অনুরোধ পুনর্বিবেচনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন।