মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের সুজানগর আইডিয়াল আলিম মাদরাসা বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে এক অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। মাদরাসায় সোলার প্যানেল স্থাপন করে সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ মাদরাসার চাহিদা পূরণ করে যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে।
পল্লী বিদ্যুতের বড়লেখা জোনালের আওতাধীন এই মাদরাসায় প্রথমবারের মতো নেট মিটার স্থাপন করা হয়েছে। এই মিটারের মাধ্যমে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরকারি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এই কার্যক্রম শুরু করেছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ জানায়, এখানে স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ থেকে দিনের বেলায় মাদরাসার প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে তা নেট মিটারের মাধ্যমে সরকারি লাইনে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হবে। মাদরাসা যখন বন্ধ থাকবে তখন বিদ্যুৎও জাতীয় গ্রিডে চলে যাবে। আবার রাতের বেলা এবং দিনে যখন সূর্যের আলো থাকবে না তখন জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের মাধ্যমে মাদরাসার সব কার্যক্রম চলবে।
সুজানগর আইডিয়াল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও এই প্ল্যান্টের মূল তত্ত্বাবধায়ক মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সময় আমাদের মাদরাসা থেকে যে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যাবে সেই বিলের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। আবার যদি দেখা যায় পুরো বছরে জাতীয় গ্রিড থেকে আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছি তার থেকে আমরা বেশি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করেছি তাহলে সরকার আমাদেরকে বিদুতের মূল্য পরিশোধ করবে। এই ব্যাপারে আমরা চুক্তি করেছি সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে।
তিনি আরো বলেন, এরকম একটি প্ল্যান্ট আমার ভাগনা তৈরি করেছে। তারটা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি এই কাজটি করি। প্রতিদিন ১৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ এখান থেকে উৎপাদন হবে। মাঝে মধ্যে কমবেশি হতে পারে। সূর্যের আলো থাকলে বিদ্যুৎ বেশি উৎপাদন হবে। আর এই বিদ্যুৎ পবিবেশ বান্ধব। কার্বন উৎপাদন কমায়। প্ল্যান্ট তৈরিতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন ও মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম এ.বি.এম মিজানুর রহমান আমাদের সহযোগিতা করেছেন।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা আমিনুল ইসলাম বলেন, গ্রামে সব সময় বিদ্যুতের সমস্যা থাকে। বিশেষ করে আবাসিক শিক্ষার্থীরা রাতে গরমের সময়ে প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহায়। তাদের এই দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমাদের কমিটির সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের পরামর্শে আমরা কাজটা শুরু করি।
তিনি আরো জানান, এই প্ল্যান্ট রেডি করতে প্রথম পর্যায়ে আমদের ৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সাড়ে ১৪ লাখ টাকা ব্যয় করে প্ল্যান্টের কাজ সমাপ্ত করা হয়।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা জোনাল অফিসের ডিজিএম ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহেল রানা চৌধুরী বলেন, সৌর থেকে গ্রাহক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে। এটা করতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। যাতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের চাপ কম থাকে। যারা এইরকম করতে চায় আমরা তাদের একটি নেট মিটার দেই। তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে অন্তর্ভুক্ত করলে আমরা তাদেরকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য টাকা দেব। আর যদি আমাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাহলে সেই আলোকেই টাকা দেবেন। এটা দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে। বিশেষ করে বড় বড় ইন্ড্রাস্টিগুলোতে।