‘কাটপেস্ট’ উপাচার্য মশিউরের পদত্যাগ, অজানা কাহিনী পড়ুন - দৈনিকশিক্ষা

‘কাটপেস্ট’ উপাচার্য মশিউরের পদত্যাগ, অজানা কাহিনী পড়ুন

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

আমির হোসেন আমুর তদবিরে প্রথমে চট্টগ্রাম ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে চাকরি বাগানো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান পলাতক অবস্থা থেকে পদত্যাগ করেছেন। রোববার (১১ আগস্ট) তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগ পাঠিয়েছেন।

জানা যায়, গণরোষের মুখে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তার সহযোগীরাও গা ঢাকা দিয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত কোটি টাকার তছরুপ করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীরা তাকে ৫ আগস্ট থেকে খুঁজছেন। মশিউরের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও কর্মকর্রতারা। 

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, মৌলিক লেখালেখির যোগ্যতা না থাকলেও শুধু অন্যের লেখা কাটপেস্ট করে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া সেই মশিউর রহমানও প্রথমে উপ-উপাচার্য এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ বাগাতে পেরেছেন।

এসএসসি থেকে শুরু করে মাস্টার্স  ও পিএইডি পর্যন্ত মশিউরের  পুরো শিক্ষা জীবনের ফলাফল আর চাকরির পুরোটাই তদবির, লবিং, স্বজনপ্রীতি আর শঠতায় ভরপুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও একই বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে ‘কাটপেস্ট’ মশিউর নামে পরিচিত। সম্প্রতি কয়েকটি প্রচার মাধ্যমে ফরমায়েশি টকশোতে গিয়েও দুর্নীতিবাজদের পক্ষে সুচিন্তিত কথা বলতে দেখা যায় এই মশিউরকেই। টকশোতে মশিউরকে দেখলেই শাহেদের কথা মনে পড়ে।  

২০২১ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক সমকালে প্রকাশিত উপাচার্য হওয়ার লবিংয়ে আছেন যারা শিরোনামে’ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘ অন্যান্যদের সঙ্গে মশিউরের নাম দেখে চমকে উঠি। মনে পড়ে কোনো প্রতিযোগীতামূলক নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করা মশিউরের এনজিওতে চাকরি শুরু করার কাহিনী। পরে কল্যাণ সমিতির ব্যানার বানিয়ে আমির হোসেন আমুর কাছে ধর্ণা ও তদবির করে প্রথমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরি বাগান। কিভাবে তার পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে শুধু তদবির করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছেন এটাও একটা গবেষণার বিষয়। মশিউর তার আরেক ভাইকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তদবির করে শিক্ষকতা পদে চাকরি বাগিয়েছে। মশিউরের পিতার বিরুদ্ধেও স্কুলের বিজ্ঞান যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বই-খাতা চুরি করে বিক্রি করার অভিযোগ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশ হয়েছে প্রায় ৩০ বছর আগে। প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদকেও পেটানোর অভিযোগও ছিলো মশিউরের পিতার বিরুদ্ধে।  একটা বেসরকারি স্কুলে চাকরি করা নিম্নবিত্ত পিতার সন্তানরা শুধু তদবির করেই শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় চাকরি পায় কি করে? এসব কাহিনী করোনাকালের  প্রতারক শাহেদের কর্মকান্ডকেও হার মানায়। এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়ন্দা ও সাংবাদিকদের বিশদ গবেষণা করা উচিত।

মনে পড়ে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় এই মশিউরসহ ডজনখানেক শিক্ষকের কাটপেস্ট ও থিসিস চুরি করে দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিসহ অধ্যাপক পদ বাগানোর তথ্য প্রকাশের কথা। সম্প্রতি সামিয়া জামানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণা কর্ম চুরি করার বিষয়টি সামনে এসেছে। কিন্তু চাপা পড়ে আছে আরো কয়েকডজন সামিয়া জামান শিক্ষক নামের কলঙ্কের কাহিনী।  

‘ঢাবি শিক্ষকদের অপরাধ প্রবণতা’ শিরোনামে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, অর্থ কেলেংকারি, থিসিস জালিয়াতি, প্রকাশনা চুরিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন এক শ্রেণির শিক্ষক। গত পাঁচ বছরে অন্তত ৩৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গছে। কিন্তু রাজানৈতিক কারণে বেশিরভাগ শিক্ষকই পার পেয়ে যাচ্ছেন। মতাদর্শিক প্রতিদ্বন্দ্বী হলে তাকে ‘সাইজ’ করার ঘটনাও রয়েছে অনেক।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গবেষণা জালিয়াতি : গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে ১১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ‘চমকপ্রদ’ হিসেবে ৫টি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। 

যুগান্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়,  সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান অন্যের গবেষণাকর্ম নকল, কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে প্রকাশনার সংখ্যা বাড়িয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ রয়েছে। কাটপেস্ট করা প্রকাশনা দেখিয়ে তিনি পদোন্নতি পেয়েছেন। অপর শিক্ষক ফাতেমা রেজিনা পাঞ্জেরী প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত মাধ্যমিক শ্রেণির গাইডকে প্রকাশনা হিসেবে দেখিয়ে পদোন্নতি নিয়েছেন।

গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে অনিয়ম করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের। কম্প্রিহেনসিভ পরীক্ষায় দু’বার ফেল করেও কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা থেকে তিনি এ ডিগ্রি পান। এর জের ধরে ওই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বরখাস্ত এবং একজন পদত্যাগ করেন। ডিগ্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ওই দেশের আদালতে একটি মামলাও হয়

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহনূর ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম তার নিজের নামে প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন শাহনূর ইসলাম। সেখানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যাপক ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের অধীনে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি তার লিখিত বিভিন্ন প্রবন্ধে ওই গবেষণার ডাটা ব্যবহার করলেও অধ্যাপক ইন্দ্রনীলের অনুমতি নেননি। বিষয়টি জানতে পেরে অধ্যাপক ইন্দ্রনীল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর অভিযোগ করেন।

সম্প্রতি সামিয়া রহমানসহ ঢাবির তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণায় চুরির অপরাধ প্রমাণিত হলেও তাদেরকে লঘুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যলয়ের বিধান অনুযায়ী তাদেরকে বরখাস্ত করা উচিত। 

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা শুরু এক মাস পর : চেয়ারম্যান - dainik shiksha স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা শুরু এক মাস পর : চেয়ারম্যান বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির নীতিমালা প্রকাশ - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির নীতিমালা প্রকাশ জোর করে গণভবনে নেয়া হয়েছিলো সাঈদের পরিবারকে - dainik shiksha জোর করে গণভবনে নেয়া হয়েছিলো সাঈদের পরিবারকে ইন্টারনেট শাটডাউনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: নাহিদ - dainik shiksha ইন্টারনেট শাটডাউনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: নাহিদ অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে ভিকারুননিসা ছাত্রীরা - dainik shiksha অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে ভিকারুননিসা ছাত্রীরা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলো যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে - dainik shiksha ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলো যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাদরাসা শিক্ষকদের জুলাই মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষকদের জুলাই মাসের এমপিওর চেক ছাড় ইউজিসির নতুন সচিব ফখরুল ইসলাম - dainik shiksha ইউজিসির নতুন সচিব ফখরুল ইসলাম please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011239051818848