শিক্ষা জাতীয়করণে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, জাতীয়করণের অনেক সংজ্ঞা আছে। কারো মতে এটা অধিগ্রহণ বা সরকারিকরণ, কারো মতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ও শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা এক সারিতে নিয়ে আসা। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের মধ্যে অনেক ধরন আছে। শিক্ষকদের কেউ এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। কেউ কমিটির মাধ্যমে চাকরি নিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কেউ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে শিক্ষকতায় এসেছেন। কেউ পিএসসির মাধ্যমে মেধার পরীক্ষা দিয়ে সরাকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হয়েছেন। সবাইকে এক স্থানে নিয়ে আসলে শিক্ষা ক্যাডার থাকবে না থাকবে না সে বিষয়েটিও ভাবতে হবে। আবার জাতীয়করণের পর সবাইকে এক স্থানে কিভাবে রাখা হবে সে বিষয়েও চিন্তা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এক পক্ষের কথা শুনেতো সবাইকে এক স্থানে নিয়ে আসতে পারি না। এক্ষেত্রে যিনি মেধার প্রতিযোগিতা করে এসেছেন, তিনি কি সেই স্থানে আসতে চান নাকি, সে মতামতও বিবেচনায় রাখতে হবে।
গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) এমপিওভুক্ত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষাবান্ধব। তাই তিনি এক ঘোষণায় এতোগুলো প্রাইমারি স্কুল সরকারিকরণ করেছেন। তবে, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণে সরকারের বিরাট একটি খরচ আছে। আবার কতো টাকা খরচ হবে সে বিষয়েও সুস্পষ্ট কোনো ধারনা নেই। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধবিবেচনায় চলমান বৈশ্বিক সংকটে একসঙ্গে এতগুলো টাকা খরচের সক্ষমতা সরকারের আছে কি-না সে বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। এজন্য আমরা জাতীয়করণের আর্থিক সংশ্লেষ পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি গঠনের কথা শিক্ষকদের বলেছি।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলছি। জাতীয়করণে শিক্ষার মান ভালো হবে না খারাপ হবে সে বিষয়েও কোনো সুস্পষ্ট ধারনা নেই। আবার এতোগুলো যে ধাপের কথা বললাম সেগুলোকেও কি প্রক্রিয়ায় এক স্থানে নিয়ে আসা হবে সে বিষয়েও কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। তাই আমরা এর যৌক্তিকতা, প্রক্রিয়া ও ফল গবেষণায় আর একটি কমিটির কথা বলছি। সার্বিক বিষয়ে ধারণা পেলে আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে হয়তো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারবো। আমার বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ও শিক্ষকদের জন্য যা ভালো হয় সে সিদ্ধান্তই নেবেন।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি জানাচ্ছেন। তাদের দাবি একই শিক্ষাক্রম পড়ানো হলেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বিস্তর বৈষম্য আছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে কয়েকহাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিদিন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এ পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার বেসরকারি শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
ব্রিফিংয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ নিয়ে গবেষণা ও যাচাই-বাছাইয়ে দুইটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন দীপু মনি। তিনি জানান, জাতীয়করণের প্রক্রিয়া কিভাবে হবে সে বিষয়ে গবেষণায় এর একটি কমিটি গঠিত হবে। ওপর কমিটির গঠিত হবে কি পরিমাণে টাকা খরচ হবে তা যাচাই বাছাই করতে। এ দুই কমিটির যাচাই-বাছাইয়ে পাওয়া ফল নিয়ে শিক্ষক ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে না।
সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এবং প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ সরকারিকরণের বিরোধীতা করে একাধিক রিট ও রাজপথে আন্দোলনকারীদের নেতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীসহ শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।