জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনির অনুগ্রহে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম চেয়ারে বসেছেন- এমন একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। এছাড়া সেই অডিওতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায়।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি খাম সাংবাদিকদের পাঠানো হয়। সেখানে উপাচার্যকে গালিগালাজ করার অডিও ক্লিপ সম্বলিত ডিভিডি, এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগের দায়মুক্তিপত্র প্রত্যাহারের আবেদন ও একটি চিঠি পাওয়া যায়।
চিঠিটির খামের ওপর প্রেরকের পরিচয় হিসেবে লেখা হয় ‘ধন্যবাদান্তে: প্রক্টরিয়াল বডির একজন সদস্য’।
৫২ সেকেন্ডের ওই অডিও ক্লিপে মাহমুদুর রহমান জনিকে বলতে শোনা যায়, ‘বাট ইউ ফরগেট, আই ওয়াজ ওয়ান্স আপন এ টাইম, আই ওয়াজ দ্য এক্স প্রেসিডেন্ট অব বিএসএল-জেইউ। আমি হয়তো ধরা খাবো, ধরা খাবো না এমন বলছি না। কিন্তু ধরা খাওয়ার আগে আমি চার-পাঁচটা মুখ শেষ করে দেবো। অ্যান্ড ভিসিকে আমি একজনকে দিয়ে রিচ করেছিলাম, ভিসি বলছে যে আমি ওকে বহিষ্কার করে দিচ্ছি, সাসপেন্ড করে দিচ্ছি। ওকে আইনের আশ্রয় নিতে বলো।’
‘তো আমি আর আইনের...(ভাষা প্রকাশের অযোগ্য), যেহেতু আমাকে আইনের আশ্রয় নিতে বলছে, আমাকে নাকি বহিষ্কার করে দিচ্ছে ইউনিভার্সিটি থেকে। তাই আমাকে বলা হয়েছে আইনের আশ্রয় নিতে। তবে ওই...(ভাষা প্রকাশের অযোগ্য) যে আমার জন্য চেয়ারে বসেছে, সেটা সে ভুলে গেছে’ অডিওতে উপাচার্যকে নিয়ে বলেন শিক্ষক জনি। পুরো অডিও ক্লিপে শিক্ষক জনিকে ‘অস্বাভাবিক’ কণ্ঠে কথা বলতে শোনা যায়।
এর আগে মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভনে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ২১ নভেম্বর মাহমুদুর রহমান জনি ও একই বিভাগের সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রভাষক আনিকা বুশরা বৈচির একটি ‘আপত্তিকর’ ছবি (সেলফি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে জনির বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ।
৮ ডিসেম্বর একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে জনির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন জনি।
এছাড়া শিক্ষক জনির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পরে জনির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তখন আগের কমিটির রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গ হয়নি মর্মে ১৩ মার্চ পুনরায় স্পষ্টীকরণ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে গত ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় জনির বিরুদ্ধে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে কুরিয়ার মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান রীতি অনুসারে, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিললে অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠিত হয়। তবে জনির ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি। সিন্ডিকেটের সভাপতি (উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম) সুকৌশলে জনিকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।’ এছাড়া অডিওটি মাহমুদুর রহমান জনি ও প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানের কথোপকথনের একটি অংশ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জোরপূর্বক দায়মুক্তিপত্র লেখানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘দায়মুক্তিপত্রের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে অনেকদিন আগে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ওই ছাত্রী এসে আমার কাছে বন্ধ খাম দেয়। সেটি আমি উপাচার্যের কাছে পৌঁছে দেই। সুতরাং জোরপূর্বক দায়মুক্তিপত্র লেখানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
অডিওর বিষয়ে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কথা বলিনি। অডিও ক্লিপ সম্পর্কে আমি জানিও না। আর উপাচার্যকে চেয়ারে বসানোর আমি কে? আমার তো এতো ক্ষমতা নেই।’
জোরপূর্বক দায়মুক্তিপত্র লেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেখানে আমার দায়’ই নেই সেখানে দায়মুক্তিপত্র কেন লেখাবো? এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।