জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম বিলুপ্তিসহ ৩ দফা দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়ের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এসময় প্রত্যয়কে মারধরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে নেন তারা।
মঙ্গলবার (৬ জুন) দিনগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গত ৩১ মে থেকে সেখানে অনশনে বসেন প্রত্যয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিদ্যুৎ চলে গেলে হঠাৎ করে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন প্রত্যয়ের ওপর হামলা করেন। এসময় প্রত্যয়কে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি
মারধরের শিকার জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করা হয়েছে। এসময় আমাদের সঙ্গে থাকা মেয়েদের শ্লীলতাহানি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের কর্মকর্তা ডা. আনিস গণমাধ্যমকে বলেন, প্রত্যয় নামে একটা ছেলেকে এখানে নিয়ে আসা হয়। সেসময় প্রত্যয় বার বার বলছিলেন- আমাকে জোর করে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। ওরা আমাকে মারধর করে জোর করে নিয়ে এসেছে। পরে তাকে আমরা চিকিৎসা দিতে চেয়েছি তবে তিনি চিকিৎসা সেবা নেয় নি।
এদিকে প্রত্যয়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক মিছিল নিয়ে উপাচার্য ভবনের সামনের উপস্থিত হন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।
এসময় তারা ৫ দফা দাবি জানান। দাবীগুলো হলো- মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থানরত সকল মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সূর্য উঠার আগে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে সব হল থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে হবে; ছাত্রী নিপীড়ন ও হামলাকারীর প্রত্যেককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার
করে তাদের বিরুদ্ধে উপাচার্যকে বাদী হয়ে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করতে হবে; প্রক্টর এবং প্রভোস্টকে অব্যাহতি দিতে হবে; গণরুম গেস্টরুম সংস্কৃতির অবসান করতে হবে।; প্রথম বর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সিটের ব্যবস্থা করতে হবে।এদিকে হামলায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, যতটুকু শুনেছি ছাত্রলীগ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। যদি কোনোভাবে কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাকর না, বডিগার্ডও না। ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমার একার পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করবো।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নিলে রাত ১টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বাসভবন থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। হামলার ঘটনায় বুধবার জড়িতদের বিষয়ে শৃঙ্খলা বোর্ডের সভা বসবে এমন- আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা হলে ফেরেন।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (৪৯তম ব্যাচের) ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র প্রত্যয় গত ৩১মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন। তার দাবিগুলো হলো- হল থেকে গণরুম বিলুপ্ত করা, অছাত্রদের বের করা ও গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।