ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ও শাখা ছাত্রদল নেতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক শাখা সমন্বয়কে মারধরের হুমকির প্রতিবাদসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মহুয়া মঞ্চ থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে বটতলা এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
তাদের অপর দাবি হলো, ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে মদদদাতা যেসব শিক্ষক এখনো স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ছাত্র রাজনীতির গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আহসান লাবিবের সঞ্চালনায় অন্যান্য সমন্বয়কসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল হাই স্বপন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে গত কয়েক বছর ধরে ছাত্রলীগ নৈরাজ্য চালিয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হলে আসন দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল। আমরা চাই না ক্যাম্পাসে আবার কোন দলীয় ছাত্র সংগঠন এসে সেরকম নৈরাজ্য সৃষ্টি করুক। আমাদের দলীয় রাজনীতি মুক্ত একটি শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস চাই।’
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আনজুম শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা একটি দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে থেকে দুর্নীতিবাজ ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেছি। কিন্তু এখন আবার আরও কিছু লদীয় ছাত্র সংগঠন চেষ্টা করছে এই ক্যাম্পাসে ঢুকে তাদের ভিত্তি গড়ার জন্য। কিন্তু আমরা সেটি হতে দেব না। সেসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাবি সমন্বয়কদের মারার পরিকল্পনা করছে তাদের পরিকল্পনাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নস্যাৎ করে দেবে। এই ক্যাম্পাসে আর কোনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চাই না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে শুধুমাত্র ছাত্ররাজনীতি নয় লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক রাজনীতিও বন্ধের দাবি জানাই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘গতকালকে কিছু স্ক্রিনশট ফাঁস হওয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতুকে মারধরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, এই প্ল্যাটফর্মের একজন সমন্বয়কের উপর যারা হামলার ষড়যন্ত্র করছে আমরা মনে করি তারাও নতুন স্বৈরাচার তৈরি করতে চাচ্ছে। আমরা তাদের স্পষ্ট ভাবে বলে দিতে চাই, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে আর কখনোই নিপীড়কের ক্যাম্পাস হতে দেব না। এজন্য যদি আবারো একটি রক্তঝরা আন্দোলন করতে হয় সেটার জন্যও আমরা প্রস্তুত আছি।’
গতকাল মঙ্গলবার জাবি শাখা ছাত্রদলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নেতাকর্মীদের কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই কথোপকথনে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তা নিয়ে সবার সঙ্গে আলেচনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতুকে মারধর করাসহ ক্যাম্পাসে সংশ্লিষ্ট কিছু লিখিত বার্তা পাওয়া যায়।