দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন একই বিভাগের ছয় নারী শিক্ষক। ২৯ মে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
অভিযোগকারীরা হলেন, প্রভাষক নাহিদা সুলতানা, রাশেদা খাতুন, শারমিন সুমি, তাহমিনা আক্তার, সাথী আক্তার ও সানজিদা তানজিম।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, দর্শন বিভাগের বর্তমান সভাপতি বিভাগের অধিকাংশ নারী সহকর্মীর সঙ্গে প্রায় সব সময়ে অবমাননাকর ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আসছেন। তিনি তার ব্যক্তিগত কক্ষে আমাদেরকে পিয়ন দিয়ে ডেকে নিয়ে বহিরাগত ব্যক্তিবর্গ ও বিভাগীয় কর্মচারীদের সামনে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি লিঙ্গ বৈষম্যমূলক মন্তব্য করেছেন। তার এই অবমাননাকর আচরণের কারণে বিভাগে যথাযথভাবে কাজ করা আমাদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আপনার কাছে আমরা নিম্নে স্বাক্ষরকারী নারী শিক্ষকরা নিয়মিত এহেন হেনস্তার প্রতিকার প্রার্থনা করছি।
ভুক্তভোগী নারী শিক্ষকদের একজন বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা মনে করি। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় পুরুষ সহকর্মী কর্তৃক নারী সহকর্মীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ করা হবে এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। তিনি একাধিকবার তার ব্যক্তিগত কক্ষে ডেকে অপরিচিত মানুষের সামনে অপমানসূচক আচরণ করেছেন এবং লিঙ্গ বৈষম্যমূলক কথা বলেছেন। আমাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ তিনি আমাদের অভিভাবক হতে পারতেন। বিভাগের প্রধান কর্তৃক বারবার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরা বিভাগের কনিষ্ঠতম নারী শিক্ষকগণ ভেঙে পড়েছি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, যে সকল নারী শিক্ষক আমাদের ডিপার্টমেন্টে আছেন তাদেরকে বিভাগের কোন সেমিনারে বা অনুষ্ঠানে দেখা যায় না। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে তাদেরকে কোন কাজ দিলে তাও সবসময় অগ্রাহ্য করেন। ২৯ মে ঘটনা হচ্ছে, ঐ দিন আমাদের বিভাগে প্রজেক্ট প্রদর্শনী ছিল। দুজন নারী শিক্ষক আমার কাছে প্রজেক্ট লেটার ফরোয়ার্ড করেন একজন পিয়ন দিয়ে। তাও আবার রিপোর্ট ছাড়া। তখন আমি তাদেরকে ডেকে বললাম আমি একজন বিভাগের চেয়ারম্যান। তাছাড়া আমি তোমাদের শিক্ষকও বটে। সে হিসেবে তোমরা নিজেরাই তো আসতে পারো প্রজেক্ট লেটার নিয়ে, পিয়ন দিয়ে পাঠানোর কি দরকার।
এ বিষয়টি যদি অসৌজন্যমূলক আচরণ হয় তাহলে কি করবো আর। আমাদের বিভাগে অধিকহারে সেশনজট ছিল। আমি আসার পর থেকে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সেশনজট কমিয়ে এনেছি। এক্ষেত্রে আমি নারী সহকর্মীদের আশানুরূপ কাজ পাইনি। তাদের সহযোগিতা নেই বললেই চলে। তারা নিয়মিত বিভাগে আসেন না। প্রকৃতপক্ষে তারা বিভাগের এক সিনিয়র শিক্ষকের বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ। তিনি যা বলেন তাই করেন। তাতে বিভাগের লাভ হোক আর না হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, আমি অভিযোগের কথা শুনেছি। তবে উপাচার্য বরাবর যে অভিযোগ দিছে সেটা জানতাম না। বিভাগে একসাথে থাকলে অনেক ধরনের সমস্যা হয়। এ বিষয়ে উপাচার্যের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তদন্ত করে সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।