পাবনার ঈশ্বদীতে এক জামায়াত নেতার বাড়িতে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুসহ ১৪ জন সংসদ সদস্য দুপুরে খাবার গ্রহণ ও বিশ্রাম নিয়েছেন। এ ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প পরিদর্শনে শেষে গতকাল বুধবার দুপুরে তারা শহরের ইসলামপুর (ভূতেরগাড়ি) এলাকায় আরআরপি শিল্প গ্রুপের অন্যতম মালিক ও ঈশ্বরদী পৌর জামায়াতের আমির গোলাম আজমের বাসভবনে যান। সেখানে খাবার ও বিশ্রাম শেষে ফেরার সময় আরআরপি ফিডমিলের আঙিনায় একটি গাছের চারা রোপণও করেন তারা। তবে জামায়াত নেতার স্বজনরা জানান, ডেপুটি স্পিকার তাদের আত্মীয়। আর ডেপুটি স্পিকার বিষয়টি সম্পর্কে অন্ধকারে থাকার তথ্য জানিয়ে বলেন, তাদের খাবারের আয়োজন করার দায়িত্ব ছিল স্থানীয় এমপির।
ডেপুটি স্পিকার ও এমপিদের আপ্যায়ন করান গোলাম আজমসহ আরআরপি গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। পরে তারা পাবনা সার্কিট হাউসে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, আরআরপি গ্রুপের মালিক গোলাম আজম, মনসুর আলম, মনিরুল আলম, আজমত আলম চার ভাই। গোলাম আজম ঈশ্বরদী পৌর জামায়াতেরও আমির। সেখানে সংসদ সদস্যরা আমন্ত্রিত ছিলেন জেনে আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। তবে এটি রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠান নয়। তাই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা তাঁর জন্য বিব্রতকর।
এদিকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শোয়াইবের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে গতকাল সকালে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর নেতৃত্বে ঈশ্বরদী আসেন সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, শাহিন আক্তার, খালেদা খানম, শিরিন আহমেদ, জিন্নাতুল বাকিয়া, বাসন্তী চাকমা, শামসুন্নাহার, নার্গিস রহমান, মনিরা সুলতানা, নাদিরা ইয়াসমিন জলি, রত্না আহমেদ, সেলিনা ইসলাম, সালমা চৌধুরী এবং ডরথী রহমান।
এ দলে ১৭ জন এমপি থাকলেও তাদের কেউ কেউ আগেই বিদায় নেন বলে জানা গেছে।
তাদের আতিথ্য গ্রহণ সম্পর্কে জানতে ঈশ্বরদী পৌর জামায়াতের আমির গোলাম আজমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে আরআরপি গ্রুপের পরিচালক ও গোলাম আজমের ভাতিজা রফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু আমার মামা। আমাদের আমন্ত্রণে তিনিসহ এমপি মহোদয়রা আমাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন। তারা দুপুরে খাওয়া শেষে বিশ্রাম নিয়ে চলে গেছেন।’
এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মধ্যে। ঈশ্বরদী পৌর যুবলীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বিপ্লব বলেন, এত জায়গা রেখে সরকারদলীয় এমপিরা খাওয়ার আর জায়গা পেলেন না। জামায়াত নেতার বাড়িতে খেতে হবে, বিষয়টি লজ্জাজনক।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, এমপিদের আগমনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যবস্থাপনায় খাবারের আয়োজন ছিল। এ বিষয়ে তিনিই ভালো জানেন।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী) আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের সফর ও খাবারের বিষয়টি জাতীয় সংসদের ব্যবস্থাপনায় হয়েছে। তাদের আমন্ত্রণেই আমি রূপপুর প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। আরআরপি গ্রুপের নিমন্ত্রণ পেলেও আমি সেখানে না গিয়ে জরুরি কাজে ঢাকায় চলে এসেছি।’