জামায়াতি ভূত চক্রের কবলে খাবি খাচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই চক্রটির বিরুদ্ধে নতুন শিক্ষাক্রমের বই নিয়ে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির বিষবাষ্প ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ওই চক্র পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে কর্মরত থেকে বিএনপি-জামাতপন্থী প্রকাশক, এনজিও ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখছে। সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব বই ছাপিয়ে বিনামূল্যে বিতরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত এনসিটিবি। উচ্চমাধ্যমিকের নির্ধারিত একাধিক বইও এনসিটিবি প্রকাশ করে। বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়। কিন্তু, এবার বিতরণ করা নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, বইয়ের পান্ডুলিপি থেকে তিনি যে ছবি বাদ দিতে বলেছিলেন তাও প্রকাশিত হয়েছে। এসবের মধ্যেই বইয়ের ভুল-অসঙ্গতি থাকলে তা চিহ্নিত করে সংশোধন করা এবং এ বিষয়ে কারও গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে দুটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনেকের ধারণা, বোর্ডে ঘাপটি মেরো থাকা জামায়াত অনুসারিরাই সরকারকে বিপদে ফেলতে পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত বিষয় ঢুকিয়ে দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে খোদ এনসিটিবিতে কর্মরত থাকা কর্মকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, বোর্ডে কর্মরত ‘জামায়াতি ভূত’ সরকারে ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো ভেস্তে দিচ্ছে। তবে, অভিযুক্তদের নাম সরাসরি বলতে চাচ্ছেন না কেউ। তবে এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ওই চক্রটি যে ঘাপটি মেরে বোর্ডে আছে বিষয়টি এমন নয়। তারা বহাল তবিয়তেই আছে। হরদম যোগাযোগ রাখছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী প্রকাশকদের সঙ্গে। যোগাচ্ছে সব ধরনের অপপ্রচারণার রসদ। বইয়ের কাজ নিয়ে ছিনিমিনি, বই প্রকাশের আগেই বিরোধীদের হাতে চলে যাওয়া, বইয়ের অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি বিরোধী রাজনীতিকদের হাতে চলে যাওয়ার সঙ্গে যুক্ত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ওই মতাদর্শের কেউ কেউ।
এসবে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে কর্মচারী ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধেও। তারা জামায়াতি স্লোগান নিয়ে সেখানে নির্বাচনও করছে। শুধু প্রকাশ্যে নিজেদের পরিচয় দাবি করছে না। কিন্তু তাদের কাজ কর্মে ঠিকই জামায়াতি মনোভাব ও তাদের পরিচয় প্রকাশ পায়। বিভিন্ন সময় তাদের নির্বাচনী পোস্টারেও জামায়াতি স্লোগান দেখা গেছে। পাঠ্যবইয়ের কাজ পাওয়া জামায়াত-বিএনপিপন্থী প্রকাশকরাই এই পোস্টার ছেপে দিয়েছে বলে অভিযোগে রয়েছে।এনসিটিবির প্রথম শ্রেণির মোট ৭৭টি পদের মধ্যে ৬২ জন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের। অবশিষ্ট পদগুলোতে বোর্ডের নিজস্ব ননক্যাডার প্রথম শ্রেণির জনবল। তাদের মধ্যে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ শাখায় কর্মরত জসিম উদ্দিন ও আবদুর রশিদ জামায়াতপন্থী হিসেবে বোর্ডে পরিচিত।
জানা যায়, গত বছরের ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় এনসিটিবির কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন। সে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয় জামায়াত-বিএনপিপন্থি একটি চক্র।
দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ভবন ও আশেপাশের কয়েকটি দেয়ালে ‘মোছাদ্দেক-গাফফার’ পরিষদের পক্ষের পোস্টারে ‘দোয়াত কলম’ মার্কায় ভোট চাওয়া হয়। সভাপতি পদে মো. মোছাদ্দেক হোছাইন ও সাধারণ সম্পাদক পদে মো. আব্দুল গাফফারসহ এই প্যানেলের মোট নয়জনের ছবি ছিলো পোস্টারটিতে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ও হতাশ হয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বর্তমানে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যানের দীর্ঘদিনের পিএ হিসেবে মোছাদ্দেক বোর্ডের সব তথ্য বিরোধীদের হাতে পৌঁছে দেয় বলে অভিযোগ আছে। এখনও সরব তিনি। অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মোছাদ্দেক।
এছাড়া চেয়ারম্যানের ড্রাইভারও আগে বিএনপিনেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমের ড্রাইভার ছিলেন বলে জানা যায়।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের একটা বড় অংশ বিএনপি-জামায়াতপন্থী বলে শিক্ষা প্রশাসনের সবাই জানেন। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড ও সরকারি কলেজে কর্মরত বিসিএস সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশি।