১৪ দলের প্রস্তাবের পর জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এ জোটের নেতারা।
পাশাপাশি অন্য কোনো নামে দল গঠন করে যেন জামায়াত সামনে আসতে না পারে, সেদিকে সরকারকে সতর্ক থাকার কথা বলছেন তারা
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জামায়াত এবং দলটির অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করে সরকার।
গত সোমবার ১৪ দলের সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিসংতার ঘটনায় জামায়াত-শিবির জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধের এ সিদ্ধান্ত হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্তের পর তা কার্যকর করতে সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয়।
ওই সভায়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, দ্রুতই এ বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ক্ষমতাবলে সরকার নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র শিবির এবং এর অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করে।
এ বিষয়ে ১৪ দলের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই স্বাধীনতাবিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধে সময় হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশের মানুষ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। ১৪ দল যখন গঠিত হয়, তখন দাবি ছিল ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা।
উচ্চ আদালতের রায়ের পর নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়। তখন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ না হলেও সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে দেরিতে হলেও তা করা হয়েছে। সেজন্য সরকারকে ১৪ দল নেতারা ধন্যবাদ জানান। তবে আরও আগে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না এবং এত প্রাণহানি ঘটতো না বলে তারা মনে করেন।
১৪ দল নেতারা বলছেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের শান্তি রক্ষায় সুদূরপ্রসারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, সমাজ উপকৃত হবে। তবে অন্য কোনো নাম নিয়ে বা নতুন দল করে জামায়াত আবার যাতে সামনে আসতে না পারে সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের দল হিসেবে জামায়াত-শিবিরের বিচারের ব্যবস্থা করার কথাও বলছেন তারা।
এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যতম নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, দেরিতে হলেও স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখার ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। আমাদের (১৪ দলের) এ প্রস্তাবকে বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, দেরিতে হলেও স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলো। এটি ভালো খবর। এতে বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, সমাজ উপকৃত হবে। তবে তারা কোনো সমস্যা তৈরির চেষ্টা করলে তা মোকাবিলা করার সক্ষমতা সরকারের প্রশাসন ও সমাজের আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, এজন্য জাতি অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করেছিল। আমরা যখন ১৪ দল (গঠন) করি, তখনও দাবি ছিল ধর্মকে যারা ব্যবহার করে রাজনীতি করে, তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন তাদের যে আর্থিক খাত, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামাজিক যে ভিত্তি, সেদিকে নজর রাখতে হবে সরকারকে। এ ভিত্তি কাজে লাগিয়ে আবার যেন তারা নতুন কোনো দল গঠন করতে না পারে।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এ বিষয়ে বলেন, আরও আগে এটি করা দরকার ছিল, যখন আদালতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়। তারপরও সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে আইন সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধের দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করা দরকার। পাশাপাশি অন্য কোনো নাম নিয়ে বা অন্য কোনো দলের নামে তারা যেন আবার সামনে চলে আসতে না পারে, সেই পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে।