‘ফুটবলের আরেকটি বিরক্তিকর রাত’-সামাজিক মাধ্যমে কথাটা সাবেক ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকারের। লিনেকার কথাটা যে মজা করেই লিখেছেন, সেটা এতক্ষণে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কাতারে গত রাতে ফুটবলের এক পাগলপারা রাতই দেখলেন ফুটবলপ্রেমীরা। কোস্টারিকাকে হারিয়েও লাভ হয়নি জার্মানির। একই সময়ে আরেক ম্যাচে স্পেনকে হারিয়ে জাপানের চমকে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে গেছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে জাপান। অন্যদিকে হেরেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট কেটেছে স্পেন। এদিন নিজেদের জিততে তো হতোই, জার্মানিকে চোখ রাখতে হচ্ছিল স্পেন-জাপান ম্যাচের দিকেও। দুটো ম্যাচের সমীকরণ না মিললে যেটা হতো, টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা। সমীকরণের শঙ্কা-সংশয় মেলাতে পারেনি জার্মানি। নিজেদের জেতার কাজটা ঠিকঠাক করলেও, স্পেন-জাপান ম্যাচের হিসাব পক্ষে আসেনি জার্মানদের। এশিয়ান জায়ান্টদের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় স্পেন। এই ফলই কাল হয় জার্মানদের।
প্রথমার্ধের একাদশ মিনিটে আলভারো মোরাতার গোলে এগিয়ে গিয়েও পরে দুই গোল হজম যায় যায় স্পেন। তবে দ্বিতীয়ার্ধে চমকে দেয় জাপান। ৪৮ মিনিটে স্প্যানিশ ডিফেন্সের ভুলে বল পেয়ে ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে বুলেট গতির শট নেন রিতসু দোয়ান। বলে হাত লাগিয়েও সেটিকে বাইরে পাঠাতে পারেননি উনাই সিমন। বলের গতিতে পরাস্ত হন স্প্যানিশ গোলরক্ষক। ম্যাচের ৫১ মিনিটে জাপানের জয়সূচক গোলটি করেন আও তানাকা। অন্যদিকে বাঁচা-মরার ম্যাচে শুরু থেকে কোস্টারিকার রক্ষণে কাঁপন ধরিয়ে দেয় জার্মানি। তবে কাঙ্ক্ষিত প্রথম গোলের দেখা মেলে ম্যাচের দশম মিনিটে। দুর্দান্ত এক পাল্টা আক্রমণ থেকে জার্মানদের এগিয়ে দেন স্ট্রাইকার সের্গে নাবরি। নাবরির নিখুঁত হেডে প্রথমবার উচ্ছ্বাসে ভাসে জার্মানরা। অবশ্য আগের মিনিটেও এগিয়ে যেতে পারত চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। সুযোগ হাতছাড়া করেন থমাস মুলার।
প্রথমার্ধে আরও কিছু আক্রমণ গড়ে তুলেও গোল ওই একটিই। উল্টো শেষ দিকে গোল হজম করতে পারত জার্মানি। ৪১ মিনিটে কোস্টারিকাকে সমতায় ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন কেশের ফুয়ের। আন্টনিও রুডিগারের ভুলের পরও ম্যানুয়েল নয়্যারের দক্ষতায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় তারা। প্রথমার্ধে কোস্টারিকা ঘুরে দাঁড়ানোর যে আভাস দেয়, দ্বিতীয়ার্ধে সেটার প্রতিফলন ঘটে। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে গোল করেন ইয়েলৎসিন তেহেদা। দুবারের চেষ্টায় জার্মানির জালে প্রথমবারের মতো বল জড়ায় কোস্টারিকা।
ম্যাচের ধারার বিপরীতে ৭০ মিনিটে কোস্টারিকাকে এগিয়ে দেন হুয়ান পাবলো ভার্গাস। তিন মিনিটে বাদে জার্মানিকে সমতায় ফেরান কাই হাভার্টাজ। মুহুর্মুহু আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ভিন্ন মাত্রা নেয় ম্যাচ। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে আবার জার্মানিকে এগিয়ে দেন হাভার্টাজ। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নাবরির ক্রস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন এই ফরোয়ার্ড। ইয়োশুয়া কিমিখের ক্রস থেকে ৮৯ মিনিটে জার্মানির হয়ে চতুর্থ গোল করেন নিকলাস ফুলক্রুগ। তবে শেষ পর্যন্ত ভাগ্য সহায় হয়নি জার্মানদের। জার্মানদের বিদায়ের দিনে পুরুষদের ফুটবল বিশ্বকাপে প্রথমবার ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন নারী রেফারিরা। এই ম্যাচে মূল রেফারি হিসেবে ছিলেন ফ্রান্সের স্তেফানি ফ্রাপার্ত। তাঁর সহকারী দুই নারী রেফারি—ব্রাজিলের নেউজা বাক ও মেক্সিকোর কারেন দিয়াজ।